" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory হিমালয়ের রহস্যময় 'সঞ্জীবনী': কর্ডিসেপস বা কিড়া জড়ির আদিান্ত //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

হিমালয়ের রহস্যময় 'সঞ্জীবনী': কর্ডিসেপস বা কিড়া জড়ির আদিান্ত

 


প্রকৃতি মাঝে মাঝে এমন কিছু সৃষ্টি করে যা মানুষের কল্পনাকেও হার মানায়। হিমালয়ের বরফাবৃত পর্বতশৃঙ্গে লুকিয়ে থাকা কর্ডিসেপস সাইনেনসিস (Cordyceps sinensis) ঠিক তেমনই এক বিস্ময়। এটি কোনো সাধারণ উদ্ভিদ নয়, আবার পুরোপুরি প্রাণীও নয়; বরং এটি একটি পরজীবী ছত্রাক, যা তিব্বতি মালভূমি এবং হিমালয়ের উচ্চতায় এক অদ্ভুত জীবনচক্র সম্পন্ন করে।


১. জীবনচক্র: একটি প্রাকৃতি 'জম্বি' কাহিনী

কর্ডিসেপস-এর জন্মপ্রক্রিয়া যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই ভয়ংকর। এর জীবনচক্র মূলত শুরু হয় মাটির নিচে।

  • সংক্রমণ: গ্রীষ্মের শেষের দিকে যখন হিমালয়ের পাহাড়ি পোকা বা ঘোস্ট মথ (Ghost Moth) এর লার্ভা (শুঁয়োপোকা) মাটির নিচে থাকে, তখন কর্ডিসেপস ছত্রাকের স্পোর বা রেণু তাদের শরীরে প্রবেশ করে।

  • নিয়ন্ত্রণ: শীতকাল জুড়ে এই ছত্রাকটি পোকাটির শরীরের ভেতর ডালপালা মেলতে থাকে। এটি পোকাটির শরীরের সমস্ত পুষ্টি শোষণ করে নেয় এবং এক পর্যায়ে পোকাটির মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে তাকে মাটির ঠিক উপরিভাগের দিকে নিয়ে আসে।

  • ফলাফল: বসন্তের শুরুতে পোকাটি মারা যায় এবং তার মাথার খুলি ফেটে একটি লম্বাটে বাদামী বা কমলা রঙের মাশরুম বা ছত্রাক মাটির উপরে বেরিয়ে আসে। স্থানীয়রা যখন এটি সংগ্রহ করেন, তখন তারা মাটির নিচে মৃত পোকাটি এবং উপরে ছত্রাকটি—উভয়কেই একসাথে পান। এজন্যই একে তিব্বতি ভাষায় বলা হয় 'ইয়ারসাগাম্বু' (Yarsagumba), যার অর্থ "শীতকালে পোকা, গ্রীষ্মকালে ঘাস"।


২. কেন একে 'হিমালয়ান গোল্ড' বলা হয়?

কর্ডিসেপস-এর নাম 'হিমালয়ান গোল্ড' হওয়ার পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে: দুর্লভতা এবং অত্যধিক মূল্য

  • ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা: এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৫০০ থেকে ৫,০০০ মিটার উচ্চতায় পাওয়া যায়। এই উচ্চতায় অক্সিজেন খুব কম থাকে এবং আবহাওয়া অত্যন্ত প্রতিকূল।

  • সংগ্রহের কঠিন কাজ: বরফ গলার সময় স্থানীয় গ্রামবাসীরা পাহাড়ের ঢালে হামাগুড়ি দিয়ে এটি খোঁজেন। ঘাসের মধ্যে এই ছোট ছত্রাকটি খুঁজে পাওয়া খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার মতোই কঠিন।

  • অর্থনৈতিক মূল্য: আন্তর্জাতিক বাজারে এর এক কেজির দাম ২০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এর দুষ্প্রাপ্যতার কারণে একে বিশ্বের সবচেয়ে দামী জৈব সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।


৩. আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে কর্ডিসেপস

প্রাচীনকাল থেকেই তিব্বত ও চীনে এটি জীবনীশক্তি বাড়ানোর মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক গবেষণায় এর বিস্ময়কর কিছু গুণাগুণ প্রমাণিত হয়েছে:

কর্ডিসেপিন এবং এর কার্যকারিতা ($Cordycepin$):

কর্ডিসেপস-এর প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো কর্ডিসেপিন। এর গঠন অনেকটা কোষের শক্তির উৎস 'অ্যাডেনোসিন'-এর মতো।

  • অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য: এটি ক্যান্সার কোষের বিভাজন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে।

  • শ্বাসযন্ত্রের উন্নতি: এটি ফুসফুসে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে, যা অ্যাজমা বা দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিসের রোগীদের জন্য সহায়ক।

  • কিডনি সুরক্ষা: গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের কিডনি ফাংশন উন্নত করতে এটি সাহায্য করে।

  • অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্স: এটি কোষে ATP (Adenosine Triphosphate) উৎপাদন বাড়ায়, যা শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। ১৯৯৩ সালের বেইজিং অলিম্পিকে চীনা অ্যাথলেটদের অভাবনীয় সাফল্যের পর এটি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায়।


৪. পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ ও স্থায়িত্ব

অত্যধিক চাহিদার কারণে হিমালয় অঞ্চলে কর্ডিসেপস-এর সংখ্যা দ্রুত কমছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনিয়ন্ত্রিত সংগ্রহের ফলে এটি বর্তমানে একটি 'বিপন্ন প্রজাতি' (Endangered Species) হওয়ার পথে।

ডঃ নেহা বিনওয়ালের মতো পরিবেশবাদীরা বারবার সতর্ক করছেন যে, যদি আমরা এখনই এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য 'Sustainable Harvesting' বা পরিকল্পিত সংগ্রহের নিয়ম না মানি, তবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এই মহামূল্যবান ছত্রাকটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পারে।

কর্ডিসেপস প্রকৃতি এবং বিজ্ঞানের এক মেলবন্ধন। এটি আমাদের শেখায় যে প্রকৃতির সবচেয়ে ছোট বা অদ্ভুত জিনিসটির মধ্যেও মানুষের জীবন বাঁচানোর শক্তি লুকিয়ে থাকতে পারে। তবে এই শক্তিকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদেরই।



Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies