নয়া দিল্লি: ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় বিমানবন্দরগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়নে ১৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা) বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে আদানি গোষ্ঠী।
বামপন্থীদের অভিযোগ: 'কর্পোরেট তোষণ' ও ঋণের ফাঁদ
আদানিদের এই আগ্রাসী সম্প্রসারণকে বাম নেতারা "জাতীয় সম্পদ লুট" এবং "ক্রোনি ক্যাপিটালিজম" (তোষণমূলক পুঁজিবাদ) এর জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের প্রধান অভিযোগগুলো নিম্নরূপ:
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের টাকায় ব্যক্তিগত মুনাফা: আদানি গোষ্ঠীর এই ১৫ বিলিয়ন ডলার লগ্নির প্রায় ৭০ শতাংশই আসবে ঋণ বা ধার (Debt) থেকে।
2 বাম দলগুলোর আশঙ্কা, এই বিশাল ঋণের বোঝা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং সাধারণ মানুষের আমানতের ওপর ঝুঁকি তৈরি করবে। সিপিআই(এম)-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "ব্যাঙ্কের টাকায় ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হচ্ছে, আর লাভ হলে তা যাবে মালিকের পকেটে, কিন্তু লোকসান হলে দায় নিতে হবে জনতাকে।"একচেটিয়া বাজার দখল: আগামী ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫-এ নভি মুম্বই বিমানবন্দর চালু হওয়ার কথা। এর পাশাপাশি আহমেদাবাদ, জয়পুর, তিরুবনন্তপুরম, লখনউ এবং গুয়াহাটির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোও আদানিদের নিয়ন্ত্রণে। বিরোধীদের দাবি, আকাশের দখল একটি সংস্থার হাতে চলে গেলে প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট হবে।
যাত্রী ভাড়ায় কোপ: বাম নেতাদের মতে, অতীতে দেখা গেছে বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের পরেই 'ইউজার ডেভেলপমেন্ট ফি' (UDF) বা যাত্রীদের ব্যবহারকারী ফি বহুগুণ বেড়ে যায়। এই বিপুল বিনিয়োগের টাকা তুলতে ভবিষ্যতে বিমান ভাড়ার সাথে অতিরিক্ত ফি যুক্ত হবে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে মধ্যবিত্ত যাত্রীদের ওপর।
আদানিদের মহাপরিকল্পনা
সমালোচনার মধ্যেও আদানি গোষ্ঠী তাদের লক্ষ্যে অবিচল। তাদের পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো:
লক্ষ্যমাত্রা: ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ২০ কোটি যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা তৈরি করা।
বিনিয়োগ: আগামী ৫ বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার, যার ৩০% আসবে নিজস্ব ইক্যুইটি থেকে এবং বাকিটা ঋণ।
আইপিও (IPO): বিমানবন্দর ব্যবসাকে লাভজনক করে ভবিষ্যতে শেয়ার বাজারে আনার (IPO) প্রস্তুতি নিচ্ছে গোষ্ঠীটি।
3
সরকার অবশ্য দাবি করছে যে, ভারতের বিমান পরিবহণ ক্ষেত্র বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল বাজার এবং পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণের জন্য এই বেসরকারিকরণ জরুরি। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশে মোট বিমানবন্দরের সংখ্যা ৪০০-তে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে বামপন্থীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, জাতীয় সম্পদ বিক্রি করে এই উন্নয়ন তারা মেনে নেবে না এবং এর বিরুদ্ধে সংসদে ও রাজপথে প্রতিবাদ চলবে।


