নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল:
এসি ঘরের আরাম নয়, এবার রোদে পুড়ে, ধুলো মেখে মাইলের পর মাইল হাঁটবে শ্রমিক। খনি আর কারখানার বেঁচে থাকার লড়াই এবার আছড়ে পড়তে চলেছে রাজপথে। রুজি-রুটি আর হৃত অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিতে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে বিশাল **'পদযাত্রা'**র ডাক দিল বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলি (সিআইটিইউ ও সহযোগী সংগঠন)।
দেশের অর্থনীতি যখন ধুঁকছে, টাকার দরে যখন পতন, তখন শিল্পাঞ্চলের মেহনতি মানুষের পিঠ ঠেকেছে দেওয়ালে। এই পরিস্থিতিতে আর কোনো ছোটখাটো কর্মসূচি নয়, মানুষের কাছে পৌঁছাতে দীর্ঘ পথ হাঁটার সিদ্ধান্তই নিল শ্রমিক নেতৃত্ব। কোলিয়ারি মজদুর সভার দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট করা হলো—এই পদযাত্রা কেবল হাঁটা নয়, এ হলো শাসকের চোখের দিকে চোখ রেখে শ্রমিকের জেগে ওঠার বার্তা।
আগামী ৭ই ডিসেম্বর থেকে ১৫ই ডিসেম্বর—টানা কয়েকদিন ধরে শিল্পাঞ্চলের রাজপথ কাঁপবে শ্রমিকের পদধ্বনিতে। মোট চারটি ধাপে বিভক্ত এই পদযাত্রা ছুঁয়ে যাবে খনি থেকে কারখানা, বস্তি থেকে কলোনি।
পদযাত্রার মানচিত্র ও শ্রমিক নেতৃত্ব:
১. দুর্গাপুর পর্ব: বিধাননগর থেকে শুরু হয়ে এই পদযাত্রা দুর্গাপুর শহর পরিক্রমা করে শেষ হবে চণ্ডীদাস মার্কেটে। ইস্পাত নগরীর বুকে এই পদযাত্রায় হাঁটবেন অগণিত শ্রমিক। ১৫ তারিখের এই কর্মসূচিতে পা মেলাবেন জননেতা মহম্মদ সেলিম।
২. খনি অঞ্চল পরিক্রমা: জামুড়িয়ার পনিয়াটি ওয়ার্কশপ থেকে শুরু হয়ে জে.কে নগর, রানিগঞ্জ, হরিপুর, বহুলা, অন্ডাল ও উখড়া হয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে এই পদযাত্রা শেষ হবে কাজোরায়। ১৫ ডিসেম্বর এই যাত্রার সমাপ্তি ঘটবে এক বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে, যেখানেও উপস্থিত থাকবেন মহম্মদ সেলিম।
৩. বার্নপুর-আসানসোল পর্ব: ৬ তারিখ থেকে শুরু হবে বার্নপুরের পদযাত্রা। বার্নপুর থেকে গোটা আসানসোল ঘুরে শ্রমিকরা ফের মিলিত হবেন বার্নপুর কারখানার গেটে। নেতৃত্বে থাকবেন শ্রমিক নেতা পার্থ মুখার্জি।
৪. সাকতোড়িয়া টু চিত্তরঞ্জন: ইসিএল-এর সদর দপ্তর সাকতোড়িয়া থেকে শুরু হয়ে বরাকর, কুলটি, সালানপুর পেরিয়ে পদযাত্রা পৌঁছাবে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার গেটে। এই দীর্ঘ পথে শ্রমিকদের সঙ্গে হাঁটবেন যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি।
নেতৃত্বের কথায়, "এই পদযাত্রা আসলে প্রতিবাদের পদধ্বনি।" আসানসোলের ধুলো ওড়া পথে যখন হাজার হাজার মানুষ পা মেলাবে, তখন সেই আওয়াজ নিশ্চয়ই কানে পৌঁছাবে শাসকের—এই সংকল্প নিয়েই পথে নামছে লাল ঝান্ডা।



