নয়াদিল্লি/বিশাখাপত্তনম, ১৫ই ডিসেম্বর: শীতের ভোরের কুয়াশা ভেদ করে আজ ভারতের প্রতিটি প্রান্তে একটাই রং জ্বলে উঠল—লাল। আজ ১৫ই ডিসেম্বর, সিআইটিইউ (CITU)-এর ডাকে সারা দেশ জুড়ে পালিত হলো ‘রেড ফ্ল্যাগ ডে’ বা লাল ঝান্ডা দিবস।
ভাষা আলাদা, পোশাক আলাদা, কিন্তু আজ কাশ্মীর উপত্যকা থেকে কেরালার নারিকেল কুঞ্জ, মুম্বাইয়ের ব্যস্ত ডক থেকে বাংলার চটকল—সর্বত্র শ্রমিকের হৃদস্পন্দন মিলেমিশে একাকার। সামনেই অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সিআইটিইউ-এর ১৮তম সর্বভারতীয় সম্মেলন। সেই ঐতিহাসিক সম্মেলনের প্রাক্কালে আজ গোটা দেশ যেন এক রক্তস্নাত শপথের সাক্ষী থাকল।
ভিডিওতে ভেসে আসা সেই দৃশ্য কেবল অন্ধ্রপ্রদেশের নয়, এ যেন আজ গোটা ভারতের প্রতিচ্ছবি। হিমাচলের আপেল বাগান থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর অটোমোবাইল হাব—কোথাও বাদ নেই। কারখানার সাইরেনের সাথে আজ মিশে গেছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের স্লোগান। যে হাতগুলো সারা বছর মেশিনের চাকা ঘোরায়, যে কাঁধগুলো সভ্যতার ভার বয়ে চলে, আজ সেই হাতগুলোই মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে স্পর্ধা।
কেন এই আবেগ?
কারণ এই লাল পতাকা কেবল এক টুকরো কাপড় নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে অধিকার আদায়ের জন্য শহীদ হওয়া অগণিত শ্রমিকের স্মৃতি। দ্রব্যমূল্যের আগুনে যখন শ্রমিকের সংসার পোড়ে, যখন শ্রম কোড বা বেসরকারিকরণের নামে কেড়ে নেওয়া হয় রুজি-রুটি, তখন এই পতাকাই হয়ে ওঠে তাঁদের একমাত্র আশ্রয় ও হাতিয়ার।
আগামী ৪ঠা জানুয়ারি বিশাখাপত্তনমের সমুদ্র উপকূলে জনসমুদ্রের ডাক দেওয়া হয়েছে। তার আগে আজকের এই দেশব্যাপী পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি ছিল শাসকের প্রতি এক চরম হুঁশিয়ারি। দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই বা হায়দ্রাবাদ—আজ সব পথ মিশে গেছে বিশাখাপত্তনমের দিকে।
শ্রমিক নেতারা আজ আবেগমথিত কণ্ঠে বলেন, "এই পতাকা আমাদের গর্ব, এই পতাকা আমাদের অস্তিত্ব।" আজকের দিনটি প্রমাণ করে দিল, সীমানা বা কাঁটাতার দিয়ে শ্রমিকের ঐক্যকে ভাগ করা যায় না। সারা ভারত জুড়ে আজ যে লাল আবির উড়ল, তা বুঝিয়ে দিল—শোষণের রাত যত দীর্ঘই হোক, মেহনতি মানুষ লড়তে জানে, তারা হার মানবে না।
বিশাখাপত্তনমের সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আজ গোটা দেশের শ্রমজীবী মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখল—এক শোষণমুক্ত ভোরের স্বপ্ন।