কথা আছে না যদি লক্ষ্য স্থির থাকে কোনো কিছুই আটকে থাকবে না , এই আপ্ত বাক্য বাস্তবে করে দেখালেন প্রতীক্ষা টন্ডলকার।ব্যাংকের সাফাই কর্মী হয়ে গেলেন ব্যাংকের প্রধান আধিকারিক।তার লড়াই প্রেরণা এখন বহু মানুষের। ছিলেন স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার সাফাই কর্মী বর্তমানে তিনি সেই ব্যাংকের একজন এ জি এম।ঘটনাটি পুনে শহরের দিনরাত পরিশ্রম করেই চাকরির পরীক্ষায় প্রস্তুতি নিয়েছিলেন প্রতীক্ষা যার ফলাফল সবার সামনে।কিভাবে প্রতীক্ষা উঠে এলো এই সাফল্যের শিখরে তা জানতে এখন গোটা দেশটি মানুষ উদগ্রীব।
অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা, প্রতীক্ষাকে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় । ১৯৬৪ সালে জন্ম নেওয়া প্রতিক্ষার স্বামী স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় বাইন্ডারের কাজ করত। কিন্তু ১৯৮৪ সালে তার স্বামী মারা যান এবং এক অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। কিন্তু পরিস্থিতির ভয় না পেয়ে তিনি SBI ব্যাঙ্কে ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করেন যেখানে তার স্বামী কাজ করতেন। অস্থায়ী চাকরি পাওয়া প্রতিক্ষা চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যান। কারণ প্রতিক্ষা জানত যে শিক্ষাই পরবর্তী পদ এবং স্থায়ী চাকরি পাওয়ার একমাত্র উপায়।
শিক্ষাই এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র বিকল্প হওয়ায় প্রতিক্ষা দিনরাত কাজ করে পড়াশোনা করে প্রথম শ্রেণীতে দশম পাস করে। এরপর একটি ব্যাংকে মেসেঞ্জারের চাকরি পান। কাজ করার সময় তিনি তার শিক্ষা চালিয়ে যান এবং এসএনডিটি কলেজ থেকে স্নাতক হন। কিছুদিন পরেই তিনি কেরানির চাকরি পান। প্রতিক্ষা, যিনি একজন কেরানি, তখন অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা থেকে প্রথম প্রচেষ্টায় প্রশিক্ষণার্থী অফিসার হিসাবে নির্বাচিত হন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে চাননি তারা। অফিসারের পদে পৌঁছানোর জন্য তিনি এক এক ধাপ উপরে উঠছিলেন। এর পরে প্রতিক্ষা সরাসরি সহকারী মহাব্যবস্থাপকের ডিগ্রি পেয়েছে এবং শীঘ্রই স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মুম্বাই শাখায় এজিএম পোস্টে থাকবে। তাই প্রতীক্ষার গল্প, লড়াইয়ের প্রেরণা এরকম কয়েক হাজার প্রতীক্ষার জন্য যারা স্বপ্ন দেখছে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার।
এই সময়ে তিনি তার পারিবারিক দায়িত্ব সমান দৃঢ়তার সাথে পালন করেছেন। প্রতিক্ষার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মুম্বাই থেকে স্নাতক শেষ করার পর, তার ছেলে বিনায়ক আইআইটি পাওয়াই থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন। এরপর পুনের একটি বেসরকারি কোম্পানিতেও ভালো পদে চাকরি করছেন। তার মেয়ে দীক্ষা একজন বেকার এবং তার অন্য ছেলে আর্য বর্তমানে পড়াশোনা করছে। তাই প্রতিক্ষা যখন নিজের কাজে মনোনিবেশ করছে, দেখা যাচ্ছে বাড়ির দায়িত্বও সে সামলে নিয়েছে। এইভাবে, এটি আবারও দেখা গেছে যে জীবনে কেউ অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যা চায় তা অর্জন করা যায়।
গোটা দেশ প্রতীক্ষার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছে।


