সুন্দরবনের কিছু কথা
(রাজু মন্ডল )
বর্ষাকাল কাটলেই সুন্দরবন যাওয়ার হিড়িক পড়তে শুরু করবে। কিছু ছবি ও এই লেখার মাধ্যমে অগ্রিম প্লান করার সুযোগ নিশ্চয়ই আপনারা হারাতে চান না, তাই দেরি না করে চটপটি তৈরি হয়ে নেন।
এক বসন্তের সকালের সড়কপথে কলকাতা থেকে গাড়িতে পৌঁছে গেলাম গদখালি। পথেই পেটাই পরোটা, আলুর দম ও মিষ্টি সহযোগে সকালের আহার বড়ই মধুর হলো। গদখালি লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চে (লঞ্চ বুক আগে থেকেই করা ছিল) ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে এই পৌঁছালাম গোসাবার বালি দ্বীপে। দুর্গা দুয়ানী নদী যেখানে (দত্তা নদী হয়ে) বিদ্যাধরী নদীর সঙ্গে মিশেছে সেই খানেই বালি দ্বীপের জে ডি ক্যাম্পে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হল। অসাধারণ ব্যবস্থাপনা । এখানে খাওয়া-দাওয়া ও থাকার সুবন্দোবস্ত আছে। তবে আমরা যেহেতু সংখ্যায় 17 জনের মতন ছিলাম তাই শুধুমাত্র রাতে থাকার জন্য বুক করেছিলাম।
আমাদের রান্না-বান্না সব লঞ্চেই ব্যবস্থা ছিল । তবে যদিও ক্যাম্পের ডাইনিং হল আমরা ব্যবহার করেছিলাম খাওয়া দাওয়ার সময়। দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজনের পর বিকালে গ্রামটা ঘুরে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। সন্ধ্যায় পূর্ণিমার চাঁদ এক মায়াবী জগতে নিয়ে গেল আমাদের। জেটি ঘাটে বসে কত না মূল্যবান সময়ের সাক্ষী থাকলাম আমরা। রাতে আয়োজন করা হয়েছিল "বনবিবি পালার" আমাদের নতুন প্রজন্ম রাও মুগ্ধ হয়ে সেই পালা দেখল, আমাদের কে অবাক করে । আমরা হলাম আপ্লুত।
খুব ভোরে ক্যামেরা কাঁধে বেরিয়ে পড়লাম নদীর পাড় ধরে। সকালের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য গুলি সত্যিই মনে দাগ কাটছিল। কিছু ছবি দিলাম আপনাদের বোঝার জন্য। ভোরের কুয়াশা মাখা ধানক্ষেত, পুকুরে কর্মরতা মহিলা, মাছরাঙ্গার চুপ করে জলে নামা, "একটি ধানের শিষের উপর অনেক শিশিরবিন্দু , পালতোলা নৌকা, জল ফড়িং আরো কত কি ! মন ভোলানো দৃশ্য দেখে ফিরে এলাম জে ডি ক্যাম্পে । স্নান সেরে সবাই চলে এলাম লঞ্চে। সারাদিন জলপথে ম্যানগ্রোভ ও নদীর নানারূপ দেখব বলে বেরিয়ে পড়া। জলে কুমির , ডাঙায় বাঘ দেখার আশা আছে মনের মনিকোঠায়। ডালপুরি ও কাবলিচানার জমজমাট ব্রেকফাস্ট দিয়ে শুরু হলো খাওয়া-দাওয়া। সারাদিন ঘুরলাম সুন্দরবনের নানা দ্বীপ-সজনেখালি, দোবাঁকি নেতা ধোপানি ইত্যাদি। দুপুরের রাজকীয় খাবার। কি নেই - পারশে,
ভেটকি, গলদা চিংড়ি ,কাঁকড়া আরো অনেক কিছু। লঞ্চে এক অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখে ফিরে এলাম বালি দ্বীপে। তবে এখানেই শেষ নয় রাতে বসল বাউলের গানের আসর। নৈশভোজে দেশি পাঁঠার মাংস ও রুটি। অনেক রাত অব্দি চলল আড্ডা গান গল্প।
হাসি, গল্প ,গান ,দেদার আড্ডা, অফুরন্ত জলরাশি, অজানা খাঁড়ি, কত পাখি গাঙ্গচিল ,গাছপালা, সরল মানুষজন, মাঝি মাল্লার, হরিণ, ছোট ছোট গ্রাম ,জেটিঘাট, নদীর ধারে জীবনের রোজনামচা- আরো কত কি মনে জায়গা করে নেয় সুন্দরবন ভ্রমণের দুটো দিন। শহরে ফিরে গেলেও আবার সুন্দরবন আসার হাতছানি দেয় বারে বারে।




