*থ্রী ইডিয়টস সিনেমাটার কথা নিশ্চই মনে আছে আমাদের।*
২০০৯-এ রিলিজ করা রাজকুমার হীরানির থ্রী ইডিয়টস ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। এখনও হয়তো অনেকের ল্যাপটপে পাওয়া যেতে পারে ফারহান কুরেশি, রাজু রাস্তোগী, রাঞ্চোদের এই গল্প। সিনেমার শেষে এসে জানতে পারি রাঞ্চোর নাম ফুঙসুক ওয়াংরু। ইঞ্জিনিয়ার ওয়াংরু পাহাড়ে একটা স্কুল চালান। সেখানকার জনজাতির বাচ্চাদের হাতে কলমে বিজ্ঞান-টেকনোলোজি শেখান। গল্পের প্রথম থেকে রাঞ্চোর জীবন দর্শন, শিক্ষা সম্পর্কে তার 'অন্যরকম' চিন্তা ক্লাইম্যাক্সে গিয়ে যেভাবে মিলে যায় তা আমাদের মতো অনেক বাউন্ডুলেদের কাছেই অনুপ্রেরণাদায়ক।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ওয়াংরু যান্ত্রিক জনপ্রিয়তা থেকে অনেক দূরে লে-লাদাখের ভূ-প্রকৃতির আড়ালে যেভাবে নিজেকে আগলে রাখেন তা বেশ লোভনীয়। অমন একটা জীবন হলে কী ভালো হতো ভাবতে আমার তো এখনও রোমাঞ্চ লাগে। না, এতোবছর পর থ্রী ইডিয়টস এর রিভিউ লিখতে বসলাম কেনো হটাৎ তা ভেবে ভুরু কুঁচকানোর মানে নেই কোনো।
রাঞ্চো কিম্বা ফুঙসুক ওয়াংরুর গল্প কুড়িয়ে পাওয়া চোদ্দ আনা নয়। এই গল্পের নায়ক বাস্তবে হাজির রয়েছেন। লাদাখেই। তাঁর নাম সোনম ওয়াঙচুক। সোনম ওয়াঙচুককে গৃহবন্দী করেছে নরেন্দ্র মোদীর বিকাশের সরকার। তাঁর অপরাধ কী? তিনি তো কাশ্মীরি মুসলমান নন। তিনি তো আজাদীর স্লোগানও তোলেননি। তারপরেও কেনো তাকে গৃহবন্দী হতে হলো?
তাঁর অপরাধ তিনি অনশনে বসেছেন। লাদাখে চলা 'বিকাশে'র ফলে ক্রমবর্ধমান হিমাবাহের গলন, প্রাণ-প্রকৃতির সংকট এবং লাদাখের জনজাতিদের স্বার্থে লাদাখকে তপশীলি অঞ্চলের অধিকার দেবার দাবীতে পাঁচদিনের প্রতীকী অনশনে বসেছিলেন ওয়াঙচুক। তাতেই দেশভক্ত মোদীবাহিনীর চক্ষুশূল হয়েছেন তিনি। হবেনাই বা কেন! তিনি যে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী আদানী-আম্বানিদের কাশ্মীর ডেভলোপমেন্ট প্রোজেক্টের নামে দেশ বেচার চক্রান্তের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাই রাষ্ট্র সিপাহী পাঠিয়ে তাঁকে শাসিয়ে গেছে, কোনোরকম প্রতিবাদ না করার বন্ড সাইন করতে বলেছে, অনশন তুলে নিতে বলেছে। সেসবে যখন কোনো কাজ হয়নি তখন সোনম ওয়াঙচুককে গৃহবন্দী করেছে মোদীর নিউ ইন্ডিয়া বাহিনী।
সিনেমার আর বাস্তবের মাঝে ফারাক বোধহয় এখানেই। বাস্তব সবসময়েই সিনেমার থেকে অনেক অনেক বেশি জটিল। সেখানে প্রাণ-প্রকৃতির ধ্বংস আটকাতে গেলে সবসময়েই রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী হতে হয়। স্কুল-কলেজে পরিবেশ বিদ্যার বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান সেখানে সিনেমার মতোই স্বপ্ন! বাস্তবে সেই শিক্ষার প্রয়োগ নেই কেন-- এ প্রশ্ন করলেই তোমায়-আমায় লাল চোখ দেখাবে পরম-কল্যাণকামী পুঁজি-রাষ্ট্র।
✍️ সুনীতি মুখোপাধ্যায়