২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
কলকাতা
কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার একটি ট্যানারিতে ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমে তিন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত শ্রমিকরা কলকাতা পৌরসভার অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। রবিবার সকালে লেদার কমপ্লেক্সের ভিতরে সেক্টর ৬ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অধীনে নিকাশি নালা পরিষ্কারের কাজ চলছিল। আবর্জনা পরিষ্কার করতে নেমেছিলেন কলকাতা পৌরসভার কয়েকজন অস্থায়ী কর্মী। তাদের মধ্যে ফরমেজ শেখ, হাজী সেখ এবং সুমন সর্দার কাজ করার সময় ড্রেনে বর্জ্যের মধ্যে ডুবে যান।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ এবং দমকল বাহিনী। তিনজনকে উদ্ধার করা গেলেও তাদের বাঁচানো যায়নি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বর্জ্যের বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরোধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে ম্যানহোলে নামেন ফরমেজ শেখ। তিনি ফিরে না আসায় তার অনুসরণ করে নামেন হাজী সেখ এবং সুমন সর্দার। তিনজনের কেউ ফিরে না এলে অন্য শ্রমিকরা স্থানীয়দের খবর দেন এবং পরে পুলিশ ও দমকল বাহিনীকে জানানো হয়।
পাইপলাইন ফেটে বর্জ্যমিশ্রিত তরলের স্রোতে তলিয়ে যান তিন শ্রমিক। দমকল ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে দু'জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তৃতীয় শ্রমিকের সন্ধানে এখনও তল্লাশি চলছে। পুলিশ ও দমকল বাহিনীর অনুমান, বর্জ্যের বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরোধ হয়ে তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনায় পুনরায় আলোচনায় এসেছে ম্যানহোল ও সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের সময় শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব। আইন অনুযায়ী, ম্যানহোলে মানুষ নামানো নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে এই কাজ এখনও চলছে। প্রান্তিক শ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে এই বিপজ্জনক কাজ করতে বাধ্য হন, কিন্তু তাদের ন্যূনতম সুরক্ষা সরঞ্জামও দেওয়া হয় না।
১৯৯৩ সালের আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কাউকে দিয়ে অপরিষ্কার শৌচাগার, নর্দমা বা ম্যানহোল পরিষ্কার করাতে পারবে না। সুপ্রিম কোর্টও ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদের মতো বড় শহরগুলিকে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং বন্ধ করার বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এই ঘটনায় শ্রমিকদের পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। তারা দাবি করেছে, মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
এই ঘটনায় কলকাতা পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলি।