রায়পুর, ১৮ জুলাই ২০২৫: ভারতের ডিজিটাল অগ্রগতির সাথে সাথে ছত্তিশগড় এক ভয়াবহ সতর্কবার্তার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। স্মার্টফোন এখন সবার হাতে, হাতের মুঠোয় ব্যাংকিং সুবিধা, কিন্তু এই ডিজিটাল সুবিধা নীরবে সাইবার অপরাধের এক মহামারীর দরজা খুলে দিয়েছে। রাজ্য বিধানসভার সর্বশেষ অধিবেশনে প্রকাশিত তথ্য রাজ্য জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত, জাতীয় সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে ৬৭,৩৮৯টি সাইবার জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এর মানে হল, প্রতি ২০ মিনিটে প্রায় একজন - অথবা প্রতি ঘণ্টায় তিনজন - স্ক্যামারদের শিকার হচ্ছেন, যারা ফিশিং লিঙ্ক, ভুয়া অ্যাপ, প্রতারণামূলক কল এবং সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই জালিয়াতিতে জড়িত মোট অর্থের পরিমাণ ৭৯১ কোটি টাকা, যা রীতিমতো স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো।
এই অপরাধের মাত্রা এতটাই বেশি যে, আইন প্রয়োগ এবং প্রতিকারের প্রচেষ্টা এর ধারেকাছেও নেই।
রায়পুরে করুণ চিত্র: ভুক্তভোগীদের সামান্যই মিলেছে সুরাহা
রাজ্যের ডিজিটাল অপরাধের কেন্দ্রস্থল রায়পুরেই ১৬,০০০-এর বেশি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। অথচ, মাত্র ১০৭ জন ভুক্তভোগী তাঁদের টাকা ফেরত পেয়েছেন, যা অভিযোগকারীদের ০.২ শতাংশেরও কম। ব্যাংক-সম্পর্কিত জালিয়াতির ক্ষেত্রে, মাত্র তিনটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে এবং মাত্র সাতজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে।
কেন এই পরিস্থিতি? সচেতনতা ও কঠোর ব্যবস্থার অভাব
বিজেপি বিধায়ক সুনীল সোনি এবং গজেন্দ্র যাদবের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে এই পরিসংখ্যানগুলো জনসমক্ষে এসেছে। এই তথ্যগুলো শক্তিশালী ডিজিটাল সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং মানুষের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবই এই বিশাল ক্ষতির মূল কারণ। সাইবার অপরাধীরা নিত্যনতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে, এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এই দ্রুত পরিবর্তনশীল অপরাধের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
আপনার সুরক্ষার জন্য কিছু টিপস:
অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
অজানা উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন।
ফোন বা মেসেজে আসা সন্দেহজনক অফার বা লটারির প্রলোভনে সাড়া দেবেন না।
ব্যাংকিং তথ্য, ওটিপি (OTP) বা ব্যক্তিগত তথ্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
নিয়মিত আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পরীক্ষা করুন।
কোনো প্রকার সাইবার জালিয়াতির শিকার হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় অথবা জাতীয় সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল (cybercrime.gov.in)-এ অভিযোগ জানান।
এই পরিস্থিতিতে, ছত্তিশগড় সরকারের উচিত সাইবার নিরাপত্তা পরিকাঠামো জোরদার করা এবং জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা অভিযান চালানো, যাতে সাধারণ মানুষ এই ধরনের প্রতারণা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।