দুর্গাপুর, ২২শে জুলাই, ২০২৫: বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে দিশা খুঁজতে যখন সমাজচিন্তকরা বিভিন্ন মতবাদ পর্যালোচনা করছেন, তখন মার্কসবাদী সাহিত্যের প্রাসঙ্গিকতা যেন নতুন করে ফিরে আসছে। আর এই আবহে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান মার্কসবাদী পুস্তক বিক্রেতা ন্যাশনাল বুক এজেন্সি (এনবিএ) দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে এক বিশেষ বই মেলার আয়োজন করেছে। এই মেলায় মার্কসবাদী সাহিত্য সহ এনবিএ এবং অন্যান্য প্রগতিশীল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ে ৫০% পর্যন্ত বিশাল ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
২২শে জুলাই, ২০২৫ থেকে ৪ঠা আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত চলা এই বই মেলা থেকে সরাসরি এনবিএ-র নিজস্ব কাউন্টার থেকে বই কেনা যাবে। এই মেলায় শুধু মার্কসবাদী গ্রন্থই নয়, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, দর্শন, জীবনী, স্মৃতিচারণ, অনুবাদ সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস এবং শিশু-কিশোর সাহিত্য – এই সকল বিষয়ে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় লেখা বই সুলভ মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষত অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, তখন মার্কসীয় অর্থনীতির বইগুলির চাহিদা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সমালোচনা ও বিকল্প পথের সন্ধানে পাঠকদের কাছে এই ধরনের গ্রন্থগুলি এক নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এবং মেলায় উপলব্ধ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের মধ্যে রয়েছে দেবাঞ্জন চক্রবর্তীর লেখা 'শ্রম দাসত্বের শ্রম কোড', যা আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকারের নতুন শ্রম আইনগুলির বিশ্লেষণ করে শ্রমিক শ্রেণীর অধিকারের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একই লেখকের 'কর্মরতা মহিলাদের আইনি অধিকার' বইটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর্মরত নারীদের আইনি সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে। এছাড়া, আলেকজান্ডার ট্রাকটেনবার্গের 'মে দিবসের ইতিহাস' বইটি মেহনতি মানুষের দীর্ঘ লড়াইয়ের স্মরণীয় অধ্যায়গুলিকে পুনরায় সামনে আনছে। সুকুমার আচার্যের 'আজকের ধনতন্ত্র শোষণ ও সংঘাত' বইটি ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শোষণ ও সংঘাতের উপর আলোকপাত করেছে, যা পাঠকদের বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করছে।
দুর্গাপুরের কলেজ স্ট্রিট এবং বিধান নগর সহ সমগ্র অঞ্চলের পাঠকদের জন্য এনবিএ-র এই উদ্যোগ শুধু বই কেনার সুযোগই নয়, বরং বর্তমান সমাজের সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে চিন্তাশীল মানুষের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। প্রগতিশীল সাহিত্যের এই প্রচার সমাজে বৃহত্তর বিতর্কের জন্ম দেবে এবং সচেতন নাগরিক সমাজ গঠনে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।