টোকিও: জাপানে আসন্ন উচ্চকক্ষ নির্বাচনে দেশের অন্যতম পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক শক্তি জাপানি কমিউনিস্ট পার্টি (জেসিপি) তাদের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নেমেছে। মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং ক্ষমতাসীন জোটের জনপ্রিয়তা হ্রাসের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, জেসিপি এই নির্বাচনকে তাদের নীতি ও আদর্শ জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছে।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কৌশল:
জানা গেছে, এই উচ্চকক্ষ নির্বাচনে জাপানি কমিউনিস্ট পার্টি (জেসিপি) মোট ৪৫টি আসনে তাদের প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে তারা প্রধান বিরোধী দল সাংবিধানিক গণতন্ত্রী দলের (সিডিপি) সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করেছে। এই সমঝোতার মূল উদ্দেশ্য হলো, ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এবং তাদের জোট সঙ্গী কোমেইতো সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী শিবিরের ভোট ভাগাভাগি রোধ করে জয় নিশ্চিত করা। জেসিপি নেতৃত্ব মনে করে, বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যই বর্তমান সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
মূল নির্বাচনী এজেন্ডা:
জেসিপি এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এলডিপি-কোমেইতো সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। তাদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ডাগুলো হলো:
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও মজুরি হ্রাস: জেসিপি অভিযোগ করছে যে, এলডিপি সরকার কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তারা ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি এবং মজুরি হ্রাসের প্রবণতা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে।
সামাজিক বৈষম্য: দলটি সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করে একটি সমতাবাদী সমাজ গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে।
কর নীতি: তারা ধনী এবং বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলির উপর কর বৃদ্ধির প্রস্তাব করছে, যাতে সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা কমানো যায়।
সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি: পেনশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে জেসিপি।
শান্তি ও সংবিধানের ৯নং অনুচ্ছেদ: জাপানের শান্তিবাদী সংবিধানের ৯নং অনুচ্ছেদ (যা জাপানকে যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার থেকে বিরত রাখে) রক্ষা এবং সামরিক ব্যয় কমানোর পক্ষে জেসিপি দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ:
ঐতিহাসিকভাবে, জাপানের কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির অন্যতম প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তারা জাপানের রাজনীতিতে বামপন্থী ধারার প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। যদিও সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে তাদের আসন সংখ্যা কমেছে, দলটি এখনও জাপানের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, জেসিপির পথচলা সহজ হবে না। তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের কাছে পৌঁছানো এবং পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তোলা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। তাদের কট্টর বামপন্থী পরিচিতি অনেক মধ্যপন্থী ভোটারকে আকৃষ্ট করতে বাধা দিতে পারে।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ:
এই নির্বাচনে জেসিপির সাফল্য বা ব্যর্থতা কেবল তাদের নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি জাপানের সামগ্রিক বিরোধী রাজনীতির গতিপথকেও প্রভাবিত করবে। যদি তারা আশানুরূপ ফল করতে পারে, বিশেষ করে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৪৫টি আসনে ভালো ফল দেখাতে পারে, তবে এটি জাপানের রাজনীতিতে বামপন্থী ধারার পুনরুত্থানের ইঙ্গিত দেবে এবং ক্ষমতাসীনদের উপর চাপ বাড়াতে সক্ষম হবে। ২০ জুলাইয়ের নির্বাচনের ফলাফলই বলে দেবে জাপানের কমিউনিস্ট পার্টির ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে এবং তারা নিজেদের হারানো গৌরব কতটা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।