দুর্গাপুর, ১৯শে জুলাই, ২০২৫ – রসায়ন জগতে এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে যা দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত ১৮-ইলেকট্রন নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করেছে। বিজ্ঞানীরা এমন এক অর্গানো-মেটালিক যৌগ সংশ্লেষণে সফল হয়েছেন যা স্থিতিশীল অবস্থায় ২০টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন ধারণ করে, যা প্রচলিত ধারণার পরিপন্থী। জাপানের ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (OIST) এবং একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দলের এই আবিষ্কার অর্গানো-মেটালিক রসায়নের ভবিষ্যৎ গবেষণা ও শিল্প প্রয়োগে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
১৮-ইলেকট্রন নিয়ম এবং তার গুরুত্ব
অর্গানো-মেটালিক রসায়নে, বিশেষ করে ট্রানজিশন মেটাল জটিল যৌগগুলির স্থিতিশীলতা বোঝার জন্য ১৮-ইলেকট্রন নিয়ম একটি মৌলিক নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই নিয়ম অনুযায়ী, বেশিরভাগ ট্রানজিশন মেটাল যৌগ তাদের ভ্যালেন্স শেলে ১৮টি ইলেকট্রন নিয়ে সর্বাধিক স্থিতিশীল হয়, যা নোবেল গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাসের সমতুল্য। প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই নিয়ম রাসায়নিক বিক্রিয়ার পূর্বাভাস এবং নতুন যৌগ সংশ্লেষণে রসায়নবিদদের পথ দেখিয়েছে। পরিচিত অর্গানো-মেটালিক যৌগ ফেরোসিন এই ১৮-ইলেকট্রন নিয়মের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
বিস্ময়কর আবিষ্কার: ২০-ইলেকট্রন ফেরোসিন ডেরিভেটিভ
গবেষকরা প্রথমবারের মতো ফেরোসিনের ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল ২০-ইলেকট্রন যৌগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই নতুন যৌগটি শুধুমাত্র ১৮-ইলেকট্রন নিয়মকে অতিক্রমই করেনি, বরং এটি ক্যাটালিসিস এবং মেটেরিয়াল সায়েন্সে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
ড. সাতোশি তাকেবায়াশি, এই গবেষণার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী, তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, "এই প্রথম আমরা একটি স্থিতিশীল ২০-ইলেকট্রন ফেরোসিন ডেরিভেটিভ তৈরি করতে পেরেছি। এটি ক্যাটালিসিস ও মেটেরিয়াল সায়েন্সে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।"
প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই যুগান্তকারী আবিষ্কার মেটালোসিন (স্যান্ডউইচ কাঠামোযুক্ত যৌগ) এর গঠন এবং স্থিতিশীলতা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে উৎসাহিত করছে। নতুন ২০-ইলেকট্রন যৌগটির অনন্য বৈশিষ্ট্য এটিকে নতুন ধরনের অনুঘটক (catalyst) এবং উন্নত পদার্থ (advanced materials) তৈরিতে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে পারে।
এই গবেষণা অর্গানো-মেটালিক রসায়নের মৌলিক নিয়মগুলিকে পুনর্মূল্যায়ন করতে এবং এই ক্ষেত্রে আরও গভীর গবেষণার জন্য এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই আবিষ্কার কেবল গবেষণাগারের সাফল্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি শিল্পক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, বিশেষত নতুন রাসায়নিক প্রক্রিয়া এবং কার্যকারিতা সম্পন্ন উপকরণ তৈরিতে।