" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory বাংলার শিল্প স্বপ্নের অপমৃত্যু: এক স্বপ্নদ্রষ্টার অসমাপ্ত গল্প The Demise of Bengal's Industrial Dream: The Unfinished Story of a Visionary //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

বাংলার শিল্প স্বপ্নের অপমৃত্যু: এক স্বপ্নদ্রষ্টার অসমাপ্ত গল্প The Demise of Bengal's Industrial Dream: The Unfinished Story of a Visionary

 



কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির এক উজ্জ্বল অধ্যায়, এক সময়ের স্বপ্নদর্শী মুখ্যমন্ত্রী, কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আজ চিরঘুমে। তাঁর ৮০ বছরের জীবনের সমাপ্তি শুধু একটি রাজনৈতিক যুগের পরিসমাপ্তি নয়, বরং লক্ষ লক্ষ বাঙালির চোখে শিল্পায়নের যে স্বপ্ন তিনি এঁকেছিলেন, তারও এক করুণ বিদায়। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ তাঁর অনুগামী থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষরাও, কারণ সবাই জানে, এই মানুষটি বাংলার জন্য একটা অন্যরকম ভবিষ্যৎ দেখতে চেয়েছিলেন—এক নতুন, শিল্পোন্নত বাংলার স্বপ্ন।

যে স্বপ্ন তিনি বুনেছিলেন

২০০০ সালে যখন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন, তখন তাঁর চোখে ছিল একটাই লক্ষ্য: বাংলায় শিল্প। তিনি বলেছিলেন, "কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ।" দীর্ঘ দিনের বামপন্থী শ্রমিক আন্দোলনের ভাবমূর্তি ভেঙে তিনি রাজ্যের অর্থনীতিকে নতুন দিশা দেখাতে চেয়েছিলেন। টাটাদের ন্যানো প্রকল্প থেকে শুরু করে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, রঘুনাথপুরের মতো জায়গায় নতুন নতুন শিল্পতালুক গড়ার সেই উদ্যোগ ছিল এক সাহসী পদক্ষেপ। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন বাংলার সম্ভাবনা তুলে ধরতে। সেই সময়েই কলকাতার পাশেই গড়ে ওঠে এক আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক-যুবতী কাজের সুযোগ পায়। বুদ্ধদেববাবু স্বপ্ন দেখতেন, বাংলার কোনো ছেলেমেয়েকে আর চাকরির খোঁজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে হবে না।

স্বপ্নভঙ্গ ও এক করুণ পরিণতি

কিন্তু তাঁর এই স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি। সিঙ্গুরে টাটার কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে যে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, তা শুধু একটি কারখানাকে রাজ্যছাড়া করেনি, বরং তাঁর স্বপ্নের সৌধের ভিত্তিটাকেই নড়িয়ে দিয়েছিল। নন্দীগ্রামের রক্তাক্ত অধ্যায় তাঁর হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করেছিল। সেই দিনগুলোয় তাঁর আবেগ ও জেদ এক অজানা অভিমানে পরিণত হয়েছিল। তিনি বুঝেছিলেন, যে স্বপ্নের জন্য তিনি জীবন সঁপে দিয়েছেন, সেই স্বপ্নই যেন তাঁর হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে। ২০১১ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন শুধু তাঁর ক্ষমতার অবসান ঘটায়নি, তাঁর হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নভঙ্গকেও যেন পূর্ণতা দিয়েছিল। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন, একাকীত্ব ও অসুস্থতার মধ্যে তাঁর শেষ জীবন কাটে।

আজ যখন তাঁর পার্থিব শরীর নীরব, তখন বাংলার মানুষ তাঁকে মনে করছে একজন সংস্কৃতিবান, সৎ এবং এক স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে। অনেকেই বলছেন, তিনি যদি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারতেন, তবে আজ পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। হয়তো তিনি হেরে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর হার ছিল এক স্বপ্নকে বাঁচানোর লড়াইয়ের হার। তাঁর চলে যাওয়া শুধু এক রাজনৈতিক নেতার বিদায় নয়, বরং বাংলার শিল্পের এক অপূর্ণ স্বপ্নের কারিগরেরও শেষ বিদায়। তাঁর রেখে যাওয়া স্বপ্নগুলি হয়তো আজ বাংলার আকাশে বিষণ্ণ মেঘ হয়ে ভাসছে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies