" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory চিলিতে রক্তস্নাত সকাল: সালভাদর আলেন্দের পতন এবং এক দেশের স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস A Nation Interrupted: Chile’s 1973 Coup and the Death of Democracy //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

চিলিতে রক্তস্নাত সকাল: সালভাদর আলেন্দের পতন এবং এক দেশের স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস A Nation Interrupted: Chile’s 1973 Coup and the Death of Democracy

 



১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ — চিলির ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। এদিন সকালে চিলির আকাশে যুদ্ধবিমানের গর্জন শোনা যায়, রাষ্ট্রপতি ভবন ‘লা মোনেদা’ জ্বলতে থাকে আগুনের লেলিহান শিখায়। এক রাষ্ট্রপতির শেষ প্রতিরোধ আর এক জাতির গণতন্ত্রের শেষ নিশ্বাস – ইতিহাসের পাতায় গভীর রক্তাক্ত অক্ষরে লেখা হয়ে যায়।

এক স্বপ্নবান রাষ্ট্রপতির পতন

সালভাদর আলেন্দে — ল্যাটিন আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট। তার স্বপ্ন ছিল, সমাজের প্রান্তিক মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তিনি চেয়েছিলেন এক এমন চিলি, যেখানে জমির ওপর কৃষকের অধিকার থাকবে, শিল্প হবে জাতির সম্পদ, আর দরিদ্র মানুষের জন্য থাকবে শিক্ষা ও চিকিৎসা।

কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে ছিল অন্তহীন বাধা, বৈদেশিক ষড়যন্ত্র আর দেশের ভেতরের রাজনৈতিক বিভাজন। তাঁর উদ্যোগগুলো শক্তিশালী গোষ্ঠীর স্বার্থে আঘাত হানে, আর সেই ক্ষোভ ধীরে ধীরে জমে ওঠে ষড়যন্ত্রের ঝড়ে।

অভ্যুত্থানের নির্মম ভোর

১৯৭৩ সালের সেই ভোরে, চিলির সেনাবাহিনী রাজধানী সান্তিয়াগোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। আকাশ থেকে বোমা পড়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় গণতন্ত্রের কণ্ঠস্বর। আর ভেতরে তখনও লাল গেঞ্জি গায়ে চাপিয়ে অস্ত্র হাতে প্রতিরোধে দাঁড়িয়ে আছেন আলেন্দে — শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নতিস্বীকার করেননি।
তিনি একটি শেষ রেডিও বার্তায় চিলির জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন:

"ইতিহাস আমাদের রায় দেবে। আমি নিশ্চিত, আমি চিলির জনগণের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলাম।"

তারপর, এক তীক্ষ্ণ গুলির শব্দ। ভবনের ভেতরেই জীবন বিসর্জন দেন আলেন্দে। সেদিন শুধু একজন রাষ্ট্রপতি নয়, এক জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকও হারিয়ে যায়।



পরবর্তী দমন-পীড়নের দুঃস্বপ্ন

সেই অভ্যুত্থানের পর চিলি ঢুকে পড়ে এক ঘোর অমানিশার মধ্যে। জেনারেল অগাস্টো পিনোচেটের নেতৃত্বে সামরিক জান্তা দমন করে সমস্ত রাজনৈতিক স্বাধীনতা। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় স্টেডিয়ামে, যেখানে প্রিয়জনেরা হারিয়ে যায় এক অনিশ্চিত অন্ধকারে।

শুধু মৃত্যু নয় — ছিল অকথ্য নির্যাতন, মানসিক ভয়াবহতা, এবং নির্বাসনের হাহাকার।
তথ্য অনুযায়ী:

  • ৩,২১৪ জন মানুষ নিহত বা নিখোঁজ,
  • প্রায় ২৭,২৫৫ জনকে নির্যাতন,
  • ২ লক্ষেরও বেশি নাগরিক দেশ ত্যাগে বাধ্য।

এই সংখ্যা শুধু পরিসংখ্যান নয় — প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে একেকটি ভেঙে যাওয়া পরিবার, কাঁদতে থাকা মা-বাবা, অথবা হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের ছায়া: পর্দার অন্তরালে এক সুপার পাওয়ার

চিলির এই অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এক গভীর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ঠান্ডা যুদ্ধের উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে, আলেন্দের সমাজতান্ত্রিক দর্শন আমেরিকার চোখে ছিল এক বিপজ্জনক স্ফুলিঙ্গ। সিআইএ'র গোপন কার্যকলাপ, অর্থনৈতিক অবরোধ, ও রাজনৈতিক প্ররোচনার মাধ্যমে তারা আলেন্দে সরকারকে দুর্বল করতে চায়।
যদিও সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি, তবে তারা দ্রুতই পিনোচেটের সরকারকে সমর্থন জানায় এবং সাহায্য পাঠায় — যা বহু মানুষের কাছে এক নির্মম বিশ্ব রাজনীতির চিত্র।

এক জাতির ক্ষত, এক পৃথিবীর শিক্ষা

আজ এত বছর পরেও, চিলির মানুষ সেই ঘটনার বেদনা ভুলতে পারেনি। সেই দিনটি শুধু এক অভ্যুত্থান নয়, ছিল একটি জাতির হৃদয়বিদারক চিৎকার। গণতন্ত্রের পতাকা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল সেদিন — আর গুনগুন করে চলা প্রতিরোধের সুর রক্তের ছোপে হারিয়ে গিয়েছিল।

আজও চিলির রাস্তায় অজস্র মা খুঁজে ফেরেন তাদের সন্তানদের মুখ, যারা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।

চিলির ১৯৭৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থান ইতিহাসের এক নির্মম শিক্ষার নাম। এটি শুধুই রাজনৈতিক পালাবদল নয়, বরং মানবতার হৃদয়ে এক গভীর ক্ষত, যা এখনও রক্তাক্ত। সালভাদর আলেন্দের আত্মত্যাগ আজও মনে করিয়ে দেয়— গণতন্ত্র কখনও বিনামূল্যে আসে না, এর জন্য মূল্য দিতে হয় রক্ত ও আত্মা।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies