" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory চীনের জনসংখ্যা নীতিতে ঐতিহাসিক মোড়: 'এক সন্তান' থেকে 'তিন সন্তান' নীতি গ্রহণ, শ্রমশক্তি সংকট মোকাবিলায় জোর। বিবাহবিচ্ছেদ হার বাড়লেও এখনও আমেরিকার চেয়ে কম। //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

চীনের জনসংখ্যা নীতিতে ঐতিহাসিক মোড়: 'এক সন্তান' থেকে 'তিন সন্তান' নীতি গ্রহণ, শ্রমশক্তি সংকট মোকাবিলায় জোর। বিবাহবিচ্ছেদ হার বাড়লেও এখনও আমেরিকার চেয়ে কম।

 


আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ:

জনসংখ্যা বার্ধক্য (aging population) এবং ক্রমহ্রাসমান শ্রমশক্তির (shrinking workforce) চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন সরকার তার দীর্ঘদিনের কঠোর পরিবার পরিকল্পনা নীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে কঠোরভাবে বলবৎ থাকা 'এক সন্তান নীতি' (one-child policy) থেকে সরে এসে দেশটি এখন ২০২১ সাল থেকে 'তিন সন্তান নীতি' (three-child policy) চালু করেছে। এই নীতি পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হলো জন্মহার বৃদ্ধি করে দেশের জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখা।

তবে, চীনের সমাজ দ্রুত আধুনিকায়নের দিকে ধাবিত হওয়ায় সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের হারও ক্রমশ বাড়ছে। তা সত্ত্বেও, বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ বিবাহবিচ্ছেদ হারযুক্ত দেশ আমেরিকার (USA) তুলনায় চীনের বিচ্ছেদের হার এখনও বেশ খানিকটা কম। উল্লেখযোগ্যভাবে, আমেরিকার জাতীয় পর্যায়ে চীনের মতো কোনো কঠোর পরিবার পরিকল্পনা নীতি নেই এবং সেখানে প্রজনন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলি সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত।

চীনের নীতির ঐতিহাসিক পরিবর্তন ও উদ্দেশ্য

চীনের পরিবার পরিকল্পনা নীতির ইতিহাস দীর্ঘ এবং কঠোর। ১৯৪৯ সালে শুরু হওয়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা কমাতে ১৯৭৯ সালে 'এক সন্তান নীতি' চালু করা হয়, যা জন্মহার কমাতে বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু ২০১৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যা পিরামিডে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হওয়ায় ২০১৬ সালে সরকার 'দুই সন্তান নীতি' গ্রহণ করে। সর্বশেষ ২০২১ সালে দেশের জন্মহার আরও কমে যাওয়ায় এবং জনসংখ্যাগত সংকট ঘনীভূত হওয়ায় 'তিন সন্তান নীতি' কার্যকর করা হয়।

বর্তমানে চীনা পরিবারগুলিকে নির্দিষ্ট জন্মসীমা অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নীতিটি এখন শাস্তির পরিবর্তে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রণোদনা (incentives), যেমন ট্যাক্স ছাড় এবং আবাসন সুবিধা, প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করছে। এর পাশাপাশি, কর্মজীবনের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং সামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তনের কারণে চীনে বিবাহের হারও রেকর্ড নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আমেরিকার পরিবার পরিকল্পনা: ব্যক্তিগত পছন্দই প্রাধান্য

অন্যদিকে, আমেরিকায় প্রজনন বা পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বা বাধ্যতামূলক নীতি নেই। আমেরিকান সরকার মূলত গর্ভনিরোধ এবং মাতৃস্বাস্থ্যসেবা সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষামূলক এবং স্বাস্থ্যসেবা সমর্থন সরবরাহ করে। সেখানে বিয়ে এবং পরিবার গঠনের প্রবণতা মূলত সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গতিপ্রকৃতি দ্বারা প্রভাবিত, যা চীনের কঠোর সরকারি নীতির বিপরীত।



বিবাহবিচ্ছেদ: দুই দেশের তুলনামূলক চিত্র

উভয় দেশই যদিও বিবাহের হারে পতন দেখছে, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক চিত্রটি ভিন্ন:

দেশবিবাহবিচ্ছেদ হার (প্রতি ১,০০০ জনে)প্রবণতা ও নীতি
চীন২.০ - ২.৬ক্রমাগত বাড়ছে; ২০২১ সালে 'বিচ্ছেদ ঠান্ডা করার সময়' আইন চালু।
আমেরিকা২.৪ - ২.৭১৯৮০ সাল থেকে স্থিতিশীলভাবে কমছে; বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ হার।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীনে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন বিবাহবিচ্ছেদ নথিভুক্ত হয়েছে, যা প্রতি ১,০০০ জনে প্রায় ২.৬। চীনের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে এবং পারিবারিক স্থায়িত্ব বাড়াতে সরকার ২০২১ সালে একটি 'বিচ্ছেদ ঠান্ডা করার সময়' ('Cooling-off' divorce period) চালু করে। এই সময়ের ফলে স্বামী-স্ত্রীরা তাড়াহুড়ো করে বিবাহবিচ্ছেদ করার আগে পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ পান।

এর বিপরীতে, আমেরিকার অপরিশোধিত বিবাহবিচ্ছেদ হার (crude divorce rate) প্রতি ১,০০০ জনে ২.৪ থেকে ২.৭ এর মধ্যে। অনুমান করা হয় যে আমেরিকার প্রথম বিবাহের প্রায় ৪১% বিবাহবিচ্ছেদে শেষ হয়। এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে আমেরিকার উদার বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ আইন এবং সামাজিক পরিবর্তনের কারণে উচ্চ হারে বিবাহ এবং বিচ্ছেদের হার।

মূল প্রবণতা ও বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনের সরকার এখন একদিকে জন্মহার বাড়াতে উৎসাহিত করছে, অন্যদিকে দ্রুত নগরায়ন (urbanization) এবং সামাজিক পরিবর্তনের ফলে বিবাহবিচ্ছেদের হারও বেড়ে চলেছে। তবুও, ঐতিহ্যবাহী সামাজিক মূল্যবোধ এবং আইনি কাঠামোর কারণে চীনের বিবাহবিচ্ছেদ হার এখনও আমেরিকার চেয়ে কিছুটা নিচে রয়েছে।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, চীনের দীর্ঘ পরিবার পরিকল্পনা নীতি তার বিবাহ এবং বিচ্ছেদের প্রবণতাকে আমেরিকার থেকে ভিন্নভাবে রূপ দিয়েছে। আমেরিকা তার উচ্চ বিবাহবিচ্ছেদ হার এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পরিবার পরিকল্পনা নীতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে চীন এখন তার ঐতিহাসিক কঠোরতা থেকে সরে এসে জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মনোযোগ দিয়েছে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies