আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ:
জনসংখ্যা বার্ধক্য (aging population) এবং ক্রমহ্রাসমান শ্রমশক্তির (shrinking workforce) চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন সরকার তার দীর্ঘদিনের কঠোর পরিবার পরিকল্পনা নীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে কঠোরভাবে বলবৎ থাকা 'এক সন্তান নীতি' (one-child policy) থেকে সরে এসে দেশটি এখন ২০২১ সাল থেকে 'তিন সন্তান নীতি' (three-child policy) চালু করেছে। এই নীতি পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হলো জন্মহার বৃদ্ধি করে দেশের জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখা।
তবে, চীনের সমাজ দ্রুত আধুনিকায়নের দিকে ধাবিত হওয়ায় সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের হারও ক্রমশ বাড়ছে। তা সত্ত্বেও, বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ বিবাহবিচ্ছেদ হারযুক্ত দেশ আমেরিকার (USA) তুলনায় চীনের বিচ্ছেদের হার এখনও বেশ খানিকটা কম। উল্লেখযোগ্যভাবে, আমেরিকার জাতীয় পর্যায়ে চীনের মতো কোনো কঠোর পরিবার পরিকল্পনা নীতি নেই এবং সেখানে প্রজনন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলি সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত।
চীনের নীতির ঐতিহাসিক পরিবর্তন ও উদ্দেশ্য
চীনের পরিবার পরিকল্পনা নীতির ইতিহাস দীর্ঘ এবং কঠোর। ১৯৪৯ সালে শুরু হওয়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা কমাতে ১৯৭৯ সালে 'এক সন্তান নীতি' চালু করা হয়, যা জন্মহার কমাতে বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু ২০১৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যা পিরামিডে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হওয়ায় ২০১৬ সালে সরকার 'দুই সন্তান নীতি' গ্রহণ করে। সর্বশেষ ২০২১ সালে দেশের জন্মহার আরও কমে যাওয়ায় এবং জনসংখ্যাগত সংকট ঘনীভূত হওয়ায় 'তিন সন্তান নীতি' কার্যকর করা হয়।
বর্তমানে চীনা পরিবারগুলিকে নির্দিষ্ট জন্মসীমা অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নীতিটি এখন শাস্তির পরিবর্তে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রণোদনা (incentives), যেমন ট্যাক্স ছাড় এবং আবাসন সুবিধা, প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করছে। এর পাশাপাশি, কর্মজীবনের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং সামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তনের কারণে চীনে বিবাহের হারও রেকর্ড নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আমেরিকার পরিবার পরিকল্পনা: ব্যক্তিগত পছন্দই প্রাধান্য
অন্যদিকে, আমেরিকায় প্রজনন বা পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বা বাধ্যতামূলক নীতি নেই। আমেরিকান সরকার মূলত গর্ভনিরোধ এবং মাতৃস্বাস্থ্যসেবা সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষামূলক এবং স্বাস্থ্যসেবা সমর্থন সরবরাহ করে। সেখানে বিয়ে এবং পরিবার গঠনের প্রবণতা মূলত সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গতিপ্রকৃতি দ্বারা প্রভাবিত, যা চীনের কঠোর সরকারি নীতির বিপরীত।