(পিয়ংইয়াং, ১১ অক্টোবর, কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি)
পিয়ংইয়াংয়ের প্রাণকেন্দ্রে, ইতিহাসের নীরব সাক্ষী কুমসুসান সূর্যপ্রাসাদ (Kumsusan Palace of the Sun) আজ এক গভীর ও ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে। কমরেড তো ল্যাম (Tô Lâm), ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, তাঁর রাষ্ট্রীয় সফরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এই পবিত্র স্থানে এসে উপনীত হন। তাঁর আগমন যেন দুটি বিপ্লবী জাতির মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা অটুট বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও একবার সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত করল।
প্রাসাদের বিশাল প্রাঙ্গণ এক শান্ত, গম্ভীর পরিবেশে ছেয়ে ছিল। কমরেড তো ল্যামের মুখমণ্ডল ছিল শ্রদ্ধায় অবনত। তিনি মহান নেতা কমরেড কিম ইল সুং (Kim Il Sung) এবং মহান নেতা কমরেড কিম জং ইল (Kim Jong Il)-এর পূর্ণাঙ্গ মূর্তির সামনে এসে দাঁড়ান। এই দুই মহান নেতা যাঁরা কোরীয় জাতির স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদা এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ছিল এক নিছক প্রথাগত কাজ নয়, বরং হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা এক অকৃত্রিম ভক্তি।
কমরেড তো ল্যামের পক্ষ থেকে দুই নেতার মূর্তির পাদদেশে একটি বিশাল ও সুসজ্জিত পুষ্পস্তবক (Flower Basket) অর্পণ করা হয়। এই পুষ্পস্তবকের ফুলগুলি যেন ভিয়েতনামের জনগণ ও তাদের পার্টির পক্ষ থেকে কোরিয়ার জনগণের প্রতি উষ্ণ সখ্যতা এবং সংহতির বার্তা বহন করছিল। দুটি দেশের নেতারা, যারা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এই দৃশ্য উপস্থিত সকলের হৃদয়ে এক গভীর আবেগ (Emotion) সঞ্চার করে।
তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ সফরে, তিনি কোরিয়া ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সচিব কমরেড জো ইয়ং ওন (Jo Yong Won)-এর সাথে ছিলেন। কমরেড জো ইয়ং ওন, যিনি দুই পার্টির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতীক, তিনি তো ল্যামকে প্রাসাদের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখান এবং দুই মহান নেতার বিপ্লবী জীবনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন।
কমরেড তো ল্যাম প্রাসাদের অভ্যন্তরে দুই নেতার ব্যবহৃত সামগ্রী ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির প্রদর্শনী হল পরিদর্শন করেন। প্রতিটি নিদর্শন, প্রতিটি ছবি—যেন কিম ইল সুং ও কিম জং ইলের বিপ্লবী পথচলা এবং জনগণের প্রতি তাঁদের অপার ভালবাসার কথা নীরবে উচ্চারণ করছিল।
এই পরিদর্শনের শেষে, কমরেড তো ল্যাম ভিজিটর বুকে (Visitor's Book) নিজের হাতে এক মর্মস্পর্শী বার্তা লিখেন। যদিও বার্তাটির সম্পূর্ণ অংশ প্রকাশ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সেখানে ভিয়েতনাম এবং কোরিয়ার জনগণের ঐতিহাসিক ঐক্য (Unity) ও ভ্রাতৃত্ব (Fraternity) আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন এবং কিম ইল সুং ও কিম জং ইলের বিপ্লবী আদর্শকে বিশ্বজুড়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
কমরেড তো ল্যামের এই সফর এমন এক সময়ে ঘটল যখন দুই দেশই তাদের সমাজতান্ত্রিক পথে এগিয়ে চলেছে। তাঁর কুমসুসান সূর্যপ্রাসাদ পরিদর্শন কেবল দুই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো নয়, বরং এই দুই প্রগতিশীল (Progressive) রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ভিত্তি আরও মজবুত করার এক দৃঢ় অঙ্গীকার। এই ঐতিহাসিক স্থান থেকে ভিয়েতনামের সর্বোচ্চ নেতার বিদায় মুহূর্তে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে নতুন করে জন্ম নেওয়া এক গভীর ও অর্থপূর্ণ বন্ধুত্বের প্রতিধ্বনি শোনা গেল পিয়ংইয়াংয়ের বাতাসে।