লাহোর: ৯৬ বছর আগে আজকের দিনে (১৭ নভেম্বর, ১৯২৮) ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক, 'পাঞ্জাব কেশরী' লালা লাজপত রায় লাহোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে ব্রিটিশ পুলিশের বর্বর লাঠিচার্জে গুরুতর আহত হয়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর মৃত্যু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নতুন মোড় দিয়েছিল এবং ব্রিটিশ শাসনের অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
সাইমন কমিশন এবং প্রতিবাদ:
১৯২৮ সালের ৩০ অক্টোবর, ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গঠিত সাইমন কমিশন লাহোর সফরে আসে। এই কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকায় ভারতজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। লালা লাজপত রায়ের নেতৃত্বে এক বিশাল শান্তিপূর্ণ মিছিল "সাইমন গো ব্যাক!" স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে চলে। কিন্তু ব্রিটিশ সুপারিনটেনডেন্ট জেমস এ. স্কটের নির্দেশে পুলিশ নির্মম লাঠিচার্জ শুরু করে। স্কট নিজে লালাজিকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করেন।
লালাজির অমর বাণী:
মারাত্মকভাবে আহত হওয়া সত্ত্বেও লালা লাজপত রায় অদম্য সাহসে ঘোষণা করেন, "আমার ওপর আজকের এই আঘাতগুলো ভারতে ব্রিটিশ শাসনের কফিনের শেষ পেরেক হিসেবে প্রমাণিত হবে।" এই সাহসী উক্তিটি ভারতীয় জনগণের মধ্যে দেশপ্রেমের আগুন আরও প্রজ্বলিত করে তোলে।
শাহাদাত ও এর প্রতিক্রিয়া:
লাঠিচার্জে গুরুতর আঘাত পাওয়ার পর লালা লাজপত রায় দুই সপ্তাহের বেশি বাঁচতে পারেননি। ১৭ নভেম্বর, ১৯২৮ তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ বিপ্লবীদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষত ভগৎ সিং এবং তাঁর সঙ্গীরা লালাজির মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর হন এবং এর ফলস্বরূপ জে.পি. স্যান্ডার্স নামে এক ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারকে ভুলবশত হত্যা করা হয়।
তাৎপর্য:
লালা লাজপত রায়ের শাহাদাত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি ঐতিহাসিক মোড় ছিল। এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের নৃশংসতা উন্মোচন করে এবং ভারতীয়দের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে আরও ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। তাঁর আত্মবলিদান ভারতের মুক্তি সংগ্রামকে আরও তীব্র করে তুলেছিল এবং অসংখ্য যুবককে বিপ্লবী কার্যকলাপে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি আজও তাঁর সাহস, দেশপ্রেম এবং আত্মত্যাগের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।
শ্রদ্ধাঞ্জলিতে, আমরা এই মহান নেতার আত্মত্যাগ ও অদম্য স্পৃহাকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি।