ভারতের বিমান যাত্রীদের জন্য একটি দারুণ সুখবর আসছে। ভারত সরকার এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA) শীঘ্রই এমন একটি নতুন নিয়ম চালু করতে চলেছে যা ভ্রমণকারীদের বড় আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে। অনেক সময়েই জরুরি কারণে শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট টিকিট বাতিল করতে হয় এবং প্রচলিত নিয়মে টিকিটের পুরো টাকাটাই জলে যায়। এই প্রবন্ধে আমরা সহজভাবে আলোচনা করব যে এই নতুন নিয়মটি কী, এটি কীভাবে কাজ করবে এবং যাত্রীরা এর থেকে কী কী সুবিধা পাবেন।
বর্তমান বনাম নতুন নিয়ম: কী পরিবর্তন হচ্ছে?
এই নতুন নিয়মটি যাত্রীদের জন্য একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসছে, বিশেষ করে টাকা ফেরতের ক্ষেত্রে। নিচের সারণিতে বর্তমান এবং প্রস্তাবিত নতুন নিয়মের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি তুলে ধরা হলো:
বৈশিষ্ট্য | বর্তমান নিয়ম | প্রস্তাবিত নতুন নিয়ম |
বাতিলের সময়সীমা | ৩ ঘণ্টার কম সময়ে বাতিল করলে টাকা ফেরত মেলে না। | ফ্লাইট ছাড়ার ৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত বাতিল করা যাবে। |
টাকা ফেরত | শূন্য ফেরত; টিকিটের সম্পূর্ণ মূল্য কাটা যায়। | টিকিটের মূল্যের ৮০% পর্যন্ত ফেরত পাওয়া যাবে। |
কিন্তু কীভাবে এই যুগান্তকারী পরিবর্তন সম্ভব হচ্ছে? এর পেছনে রয়েছে টিকিটের সঙ্গে যুক্ত একটি বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা।
এই নতুন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করবে?
এই নতুন নিয়মটি একটি বিল্ট-ইন বা টিকিটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে কাজ করবে। প্রতিটি বিমানের টিকিটের সঙ্গেই এখন থেকে একটি ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স পলিসি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত থাকবে। এর ফলে, যদি কোনো যাত্রীকে শেষ মুহূর্তেও তাঁর টিকিট বাতিল করতে হয়, তবে এই ইন্স্যুরেন্স পলিসিটি তাঁর আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
এই ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম এবং তার খরচ সম্পর্কে তিনটি জরুরি তথ্য হলো:
- পরিমাণ: এই ইন্স্যুরেন্সের জন্য প্রিমিয়াম হবে নামমাত্র, মাত্র ৫০ টাকা।
- কে বহন করবে: এই খরচটি বিমান সংস্থা বহন করবে।
- যাত্রীর উপর প্রভাব: যাত্রীদের এর জন্য কোনো অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে না।
এই ব্যবস্থার ফলে যাত্রীরা কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই শেষ মুহূর্তের অনিশ্চয়তা থেকে আর্থিক সুরক্ষা পাবেন।
যাত্রীদের জন্য মূল সুবিধাগুলি কী কী?
এই নতুন নিয়মটি কার্যকর হলে বিমান যাত্রীরা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা পাবেন। প্রধান সুবিধাগুলি হলো:
১. আর্থিক সুরক্ষা অপ্রত্যাশিত কারণে শেষ মুহূর্তে টিকিট বাতিল করলেও যাত্রীরা এখন তাঁদের টিকিটের মূল্যের একটি বড় অংশ ফেরত পাবেন, যা তাঁদের আর্থিক ক্ষতি কমাবে।
২. সহজ ও ন্যায্য প্রক্রিয়া সরকার এবং বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (DGCA)-এর মূল লক্ষ্য হলো টিকিট বাতিলের পর টাকা ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ এবং যাত্রীবান্ধব করে তোলা।
৩. অতিরিক্ত বোঝা নেই এই বর্ধিত সুরক্ষা পাওয়ার জন্য যাত্রীদের কোনো অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে না, কারণ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম বিমান সংস্থাই বহন করবে।
যাত্রীদের এই সুবিধাগুলি দিতে সরকার ও বিমান সংস্থাগুলি দ্রুত কাজ করছে, এবং খুব শীঘ্রই এটি বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে।
এই নিয়ম কবে থেকে চালু হতে পারে?
সূত্র অনুযায়ী, ভারত সরকার এবং বিভিন্ন বিমান সংস্থাগুলির মধ্যে এই নতুন নিয়মটি কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, আশা করা যায় যে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই এই নতুন নিয়মটি সারা দেশে চালু হয়ে যাবে।
আপনার অধিকার জানুন
প্রস্তাবিত এই নতুন নিয়মটি নিঃসন্দেহে ভারতে বিমান যাত্রীদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি যাত্রীদের আরও বেশি নমনীয়তা এবং আর্থিক নিরাপত্তা দেবে। একজন সচেতন যাত্রী হিসেবে আপনার এই নতুন অধিকারগুলি সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত, যা আপনার ভবিষ্যৎ ভ্রমণকে আরও সুরক্ষিত এবং চিন্তামুক্ত করে তুলবে।


