মুম্বাই, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫: ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক নক্ষত্রপতন। চলে গেলেন বলিউডের আদরের ‘ধরম পাজি’। আজ, সোমবার মুম্বাইয়ে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই তিনি ৯০ বছরে পা দিতেন, কিন্তু নিয়তির অমোঘ বিধানে জন্মদিনের আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন এই মহাতারকা।
বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সম্প্রতি তিনি বাড়িতে ফিরেছিলেন। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ তিনি চিরঘুমে আচ্ছন্ন হলেন।
কান্নায় ভেঙে পড়ল বলিউড
ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুম্বাই জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। পবন হংস শ্মশানে যখন তাঁর নশ্বর দেহ নিয়ে আসা হয়, তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন তাঁর দুই ছেলে—সানি দেওল এবং ববি দেওল। স্বামীর চিতাগ্নির সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী হেমা মালিনী, পাশে ছিলেন মেয়ে এষা দেওল।
বলিউডের শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খান—সকলেই তাঁদের প্রিয় ‘বীরু’কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন। শ্মশানের বাইরে হাজার হাজার ভক্তের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো, যাদের অনেকেরই হাতে ছিল প্রিয় তারকার ছবি এবং চোখে ছিল জল।
স্মৃতিচারণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি
এই বিয়োগান্তক ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “ধর্মেন্দ্র জির প্রয়াণে ভারতীয় সিনেমার একটি যুগের অবসান হলো। তাঁর অভিনয় এবং ব্যক্তিত্ব প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুগ্ধ করে রাখবে।”
প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা করণ জোহর এক আবেগঘন বার্তায় লিখেছেন, “আজ একটি যুগের সমাপ্তি ঘটল... তিনি ছিলেন সত্যিকারের একজন ‘হিরো’। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমন এক শূন্যতা তৈরি হলো যা কোনোদিন পূরণ হবে না।”
প্রবীণ অভিনেত্রী সায়রা বানু শোক প্রকাশ করে বলেন, “দিলিপ সাহাব তাঁকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো দেখতেন। ধর্মেন্দ্রর চলে যাওয়াটা আমি মেনে নিতে পারছি না।”
এক সোনালী অধ্যায়ের সমাপ্তি
ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছেন ধর্মেন্দ্র। ‘শোলে’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘ফুল ঔর পাত্থর’, ‘সত্যকাম’-এর মতো কালজয়ী সিনেমায় তাঁর অভিনয় তাঁকে অমর করে রেখেছে। পর্দায় তিনি ছিলেন একাধারে ‘হি-ম্যান’ এবং অন্যদিকে রোমান্টিক নায়ক। তাঁর সরলতা এবং উষ্ণ ব্যবহার তাঁকে ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে প্রিয় মানুষে পরিণত করেছিল।
আজ চিতার আগুনে যখন নশ্বর দেহ বিলীন হলো, তখন ভারতীয় সিনেমার এক রঙিন অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। নক্ষত্র চলে যায়, কিন্তু তার দ্যুতি থেকে যায়। ধর্মেন্দ্রও তাঁর অসামান্য কাজের মাধ্যমে চিরকাল বেঁচে থাকবেন কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে।
বিদায়, ধর্মেন্দ্র। ওপারে ভালো থাকবেন।