:
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া: আগামী ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫। এই তারিখটি হয়তো অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ লক্ষ কিশোর-কিশোরীর কাছে এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। কারণ, এই দিন থেকেই তাদের চেনা ডিজিটাল পৃথিবীর দরজাটি বন্ধ হতে চলেছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার এক ঐতিহাসিক ও কঠোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে যাচ্ছে—১৬ বছরের কম বয়সী কোনো শিশু বা কিশোর আর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউব বা স্ন্যাপচ্যাটের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে না।
শৈশব ফেরানোর লড়াই নাকি অধিকার হরণ?
সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে বাবা-মায়েদের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। স্মার্টফোনের নীল আলোর পর্দায় আটকে থাকা শৈশব, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অকালে ঝরে যাওয়া প্রাণ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চরম বিপর্যয় থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতেই এই কঠোর আইন। সরকার বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম শিশুদের আসক্ত করে তুলছে, যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশ কেড়ে নিচ্ছে।
আইনটি এতটাই কঠোর যে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে এখন ভিডিও সেলফি, সরকারি আইডি বা এআই (AI) প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই করতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি ব্যর্থ হয়, তবে তাদের গুনতে হবে ৫০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত জরিমানা। ইতিমধ্যেই ১০ লাখেরও বেশি কিশোর-কিশোরীর অ্যাকাউন্ট বন্ধের মুখে।
কিশোরদের আর্তনাদ ও আইনি লড়াই
তবে এই নিষেধাজ্ঞার উল্টো পিঠে রয়েছে তরুণ প্রজন্মের তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা। আজকের যুগে যেখানে বন্ধুত্ব, পড়াশোনা এবং বিনোদনের বড় অংশজুড়ে রয়েছে অনলাইন জগৎ, সেখানে হঠাৎ করে এই বিচ্ছেদ তাদের একা করে দিচ্ছে। কিশোররা মনে করছে, তাদের মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালত (High Court) পর্যন্ত গড়িয়েছে। ‘ডিজিটাল ফ্রিডম প্রজেক্ট’-এর মতো সংগঠন এবং প্রতিবাদী কিশোররা আদালতে যুক্তি দেখাচ্ছে যে, প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে গিয়ে পুরো প্রজন্মকে প্রযুক্তিবঞ্চিত করা কোনো সমাধান হতে পারে না।
বিশ্বের দৃষ্টি অস্ট্রেলিয়ার দিকে
অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোও এখন একই পথে হাঁটার কথা ভাবছে। প্রযুক্তি বনাম মানবিকতার এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে—শিশুর সুরক্ষা নাকি তার ডিজিটাল স্বাধীনতা?
১০ ডিসেম্বর ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে অস্ট্রেলিয়ার কিশোরদের মনে বাজছে বিদায়ের সুর। হয়তো এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি প্রজন্মের শৈশব আবার খেলার মাঠে ফিরবে, অথবা তারা হারিয়ে যাবে একাকিত্বের গভীর অন্ধকারে। সময় ও বাস্তবতাই কেবল এর উত্তর দিতে পারবে।