" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory কে কে পার্ক: মিয়ানমারের সীমান্তে এক ‘নরকপুরী’ – বাণিজ্য কেন্দ্র যেভাবে হয়ে উঠল বিশ্বের ত্রাস //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

কে কে পার্ক: মিয়ানমারের সীমান্তে এক ‘নরকপুরী’ – বাণিজ্য কেন্দ্র যেভাবে হয়ে উঠল বিশ্বের ত্রাস

 



বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

তারিখ: ২৭ নভেম্বর, ২০২৫
স্থান: মিয়াবাদি, কায়িন রাজ্য, মিয়ানমার

থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার সীমান্তের বুক চিরে বয়ে গেছে মোই নদী। নদীর একপারে থাইল্যান্ডের শান্ত জনপদ, আর ঠিক অপর পারে মিয়ানমারের কায়িন (সাবেক কারেন) রাজ্যের মিয়াবাদি এলাকা। সেখানেই গড়ে উঠেছে এক বিশাল ও রহস্যময় কমপ্লেক্স—নাম তার ‘কে কে পার্ক’ (KK Park)

বাইরে থেকে দেখলে একে আধুনিক আবাসন বা বাণিজ্যিক এলাকা মনে হতে পারে। সুউচ্চ প্রাচীর, কাঁটাতারের বেড়া এবং সশস্ত্র প্রহরীদের কড়া নজরদারিতে ঘেরা এই স্থানটি গত এক দশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় ‘স্ক্যাম হাব’ বা প্রতারণার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালে যা শুরু হয়েছিল একটি সাধারণ সীমান্ত বাণিজ্য জোন হিসেবে, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তা রূপ নেয় সাইবার অপরাধ, মানবপাচার এবং নৃশংসতার এক অভয়ারণ্যে।

বাণিজ্যের আড়ালে অপরাধের সাম্রাজ্য

২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কে কে পার্কের নির্মাণকাজ চলে। উদ্দেশ্য ছিল চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো। কিন্তু ২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে এই এলাকাটি চীনা অপরাধী চক্র এবং স্থানীয় বিদ্রোহী মিলিশিয়াদের দখলে চলে যায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কে কে পার্ক এখন আর কোনো সাধারণ বাণিজ্যিক এলাকা নয়। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শহর, যেখানে রয়েছে ক্যাসিনো, হোটেল, এবং উন্নতমানের আবাসন। তবে এসবের আড়ালে চলছে ‘পিগ-বুচারিং’ (Pig-butchering) বা রোমান্স স্ক্যামের মতো ভয়াবহ সাইবার প্রতারণা। এখান থেকে আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার হাজার হাজার মানুষকে লক্ষ্য করে ভুয়া বিনিয়োগের ফাঁদ পাতা হয়, যার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।



ভেতরে এক জীবন্ত নরক

কে কে পার্কের প্রাচীরের ভেতরের জগত বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এখানে কাজ করা হাজার হাজার তরুণ-তরুণী মূলত মানবপাচারের শিকার। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের এখানে আনা হয়।

পাচার হয়ে আসা ভুক্তভোগীদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয় এবং জোরপূর্বক সাইবার প্রতারণার কাজে লাগানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তাদের দৈনিক ১৭ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়। নির্দিষ্ট ‘টার্গেট’ পূরণ করতে না পারলে নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। মারধর, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়ার (Organ Harvesting) মতো ভয়াবহ অভিযোগও উঠেছে। কেউ পালাতে চাইলে বা কাজ ছাড়তে চাইলে দাবি করা হয় বিশাল অংকের ‘এক্সিট ফি’ বা মুক্তিপণ।


নেপথ্যের খলনায়ক: মিলিশিয়া ও জান্তা সরকার


এই বিশাল অপরাধ সাম্রাজ্য টিকে আছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও তাদের সমর্থিত সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনীর ছত্রছায়ায়। কে কে পার্কের মূল নিয়ন্ত্রণ কারেন ন্যাশনাল আর্মি (KNA)-এর হাতে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন কুখ্যাত লর্ড স চিত্য থু (Saw Chit Thu)।

পূর্বে বর্ডার গার্ড ফোর্স (BGF) নামে পরিচিত এই বাহিনী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে জোটবদ্ধ। তারা এই স্ক্যাম জোনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং বিনিময়ে চীনা অপরাধী চক্রের কাছ থেকে লিজ বাবদ বিশাল অংকের অর্থ পায়। ২০২৫ সালে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ স চিত্য থু এবং তার বাহিনীকে আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

অন্যদিকে, কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (KNU)-এর মতো জান্তা-বিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপগুলো এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দাবি করে যে বিদ্রোহীরাও এই অর্থের ভাগীদার।



সাম্প্রতিক অভিযান: লোক দেখানো নাকি আসল?

আন্তর্জাতিক চাপ এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানের কারণে ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে মিয়ানমারের জান্তা সরকার কে কে পার্কে বড় ধরনের অভিযান চালায়। এই অভিযানে ২,০০০-এরও বেশি বিদেশিকে আটক করা হয় এবং স্টারলিংক (Starlink) স্যাটেলাইট ইন্টারনেট টার্মিনালসহ বিপুল পরিমাণ প্রযুক্তি সামগ্রী জব্দ করা হয়। নিকটবর্তী ‘শোয়ে কোক্কো’ (Shwe Kokko) এলাকাতেও একই ধরনের অভিযানে ১,৭৪৬ জনকে আটক করা হয়।

তবে বিশ্লেষকরা এই অভিযানকে ‘আইওয়াশ’ বা লোক দেখানো বলে মনে করছেন। তাদের মতে, জান্তা সরকার এবং তাদের মিত্র মিলিশিয়ারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ ধুলো দিতে কিছু নিচু স্তরের কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে, কিন্তু মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। মিলিশিয়া নেতারা কৌশল পরিবর্তন করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, যা প্রমাণ করে যে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের ডামাডোলে এই অপরাধ জগত পুরোপুরি নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব।

কে কে পার্ক কেবল একটি অপরাধ কেন্দ্র নয়, এটি মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এবং দুর্নীতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ। যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না ফিরছে এবং সীমান্ত এলাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততক্ষণ এই ‘নরকপুরী’ নাম ও রূপ বদলে টিকে থাকবে—এমনটাই আশঙ্কা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।


Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies