বিশেষ প্রতিবেদক
কলকাতা: পৃথিবী ও মহাকাশের মধ্যে এক অভূতপূর্ব 'মহাজাগতিক সংলাপ'-এর জল্পনায় বর্তমানে তোলপাড় বিশ্ব। রহস্যময় এক ধাতব বস্তু, যা 'বুগা গোলক' নামে পরিচিত, তার উৎস ও উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে তীব্র কৌতূহল এবং অজানা আশঙ্কা। পৃথিবীর বুকে আবিষ্কৃত এই গোলক থেকে ক্রমাগত নির্গত হচ্ছে ২.৩ থেকে ২.৪ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সির ক্ষীণ, প্রায় হৃদস্পন্দনের মতো এক নিম্ন-ফ্রিকোয়েন্সির বেতার সংকেত।
কিন্তু এই সংকেতগুলি যাচ্ছে কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই জন্ম নিয়েছে আরও বড় রহস্য। সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এখন জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে যে, বুগা গোলকের এই সংকেতগুলির লক্ষ্য হলো আমাদের সৌরজগতের মধ্যে দিয়ে যাওয়া আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু ৩আই/অ্যাটলাস (3I/ATLAS)।
অজানা অতিথির প্রতি আহ্বান?
গভীর মহাকাশ থেকে আগত এই ধূমকেতুটিকে ঘিরেও অনেকদিন ধরেই জল্পনা চলছিল। তবে বুগা গোলকের আবির্ভাবে যেন সেই জল্পনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ভিডিও এবং পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, এই গোলক হয়তো কোনো বহির্জাগতিক প্রযুক্তির অংশ, যা সুদূর অতীতে এখানে স্থাপন করা হয়েছিল এবং এখন সেই বস্তুটি ৩আই/অ্যাটলাস-এর মতো কোনো মহাজাগতিক অতিথিকে বার্তা পাঠাচ্ছে। কেউ কেউ ভাবছেন, এটি হয়তো মানবজাতির সাথে এক বৃহত্তর মহাজাগতিক যোগাযোগের প্রথম পদক্ষেপ। এই ধারণা মানুষের মনে এক রোমাঞ্চকর স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে, যা রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
স্বপ্নের বিপরীতে বিজ্ঞানের ঠান্ডা যুক্তি
কিন্তু, যখনই আবেগ চূড়ায় ওঠে, তখনই কঠোর বাস্তবতা নিয়ে এগিয়ে আসে বিজ্ঞান। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই পুরো বিষয়টিকে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। মীরক্যাট (MeerKAT) রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তাঁরা ৩আই/অ্যাটলাস ধূমকেতুর সংকেতগুলি বিশ্লেষণ করেছেন। এবং এই বিশ্লেষণই মানুষের মহাজাগতিক স্বপ্নের রাশ টেনে ধরেছে।
বিজ্ঞানীরা দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়েছেন, ৩আই/অ্যাটলাস থেকে যে বেতার নির্গমন সনাক্ত করা হয়েছে, তা কোনো কৃত্রিম সংকেত নয়। এটি সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক। ধূমকেতুর 'কোমা' (Coma) বা গ্যাসীয় আবরণ থেকে নির্গত হাইড্রক্সিল র্যাডিক্যালসের কারণে এই সংকেত তৈরি হয়েছে, যা একটি সাধারণ ধূমকেতুর কার্যকলাপের পরিচিত প্রমাণ। এর অর্থ হলো, ধূমকেতুটি কেবল গ্যাস নির্গমনের মাধ্যমে মহাকাশে তার স্বাভাবিক অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে, কোনো রহস্যময় গোলকের বার্তা গ্রহণ করছে না।
অমীমাংসিত রহস্যের নিরাশা
এই বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ তাই আপাতত বুগা গোলক এবং ৩আই/অ্যাটলাস-এর মধ্যেকার সরাসরি যোগাযোগের যাবতীয় দাবিকে অনুমান এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বে পরিণত করেছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এই দুটি বস্তুর মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ সংযোগের নিশ্চিত প্রমাণ নেই।
তবুও, পৃথিবীর বুকে থেকে আসা রহস্যময় সংকেত এবং মহাকাশের অজানা অতিথির মধ্যেকার কাল্পনিক সম্পর্ক মানুষের মনে এক অমীমাংসিত রহস্যের সৃষ্টি করেছে। বুগা গোলক কি সত্যিই এক মহাজাগতিক প্রেরক, নাকি এটি কেবলই প্রাকৃতিক কোনো ঘটনা, যা মানব মনে আশার জন্ম দিয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত বিজ্ঞানের প্রমাণের অভাবে রয়ে গেল ভবিষ্যতের গর্ভে। একদিকে মানুষের অদম্য আশা, অন্যদিকে কঠোর বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা—এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই মহাজাগতিক রহস্যের পর্দা এখনো অস্পষ্ট।