নয়াদিল্লি, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫: দেশের বিচার ব্যবস্থার এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রবিবার ভারতের ৫৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন বিচারপতি সূর্য কান্ত। রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ এনডিএ সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে তিনি শপথ বাক্য পাঠ করেন।
বামপন্থী ও প্রগতিশীল মহলের কাছে এই মুহূর্তটি কেবল ক্ষমতার হাতবদল নয়, বরং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার এক অগ্নিপরীক্ষা। বিচারপতি কান্ত এমন এক সময়ে দায়িত্ব নিলেন, যখন বিরোধীদের অভিযোগ—দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর শাসকের নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েম হয়েছে।
প্রত্যাশা ও সংশয়:
বামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং গণসংগঠনগুলোর কাছে বিচারপতি সূর্য কান্তের অতীত রায়গুলো 'মিশ্র' অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। তাঁর কর্মজীবনে নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্তকে বামপন্থীরা 'জনবিরোধী' এবং 'যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন:
৩৭০ ধারা ও কাশ্মীর ইস্যু: মোদী সরকারের জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (৩৭০ ধারা) বাতিলের সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চ বৈধতা দিয়েছিল, বিচারপতি কান্ত ছিলেন তার অন্যতম সদস্য। বামেদের মতে, এই রায় রাজ্যের অধিকার খর্ব করেছে এবং কাশ্মীরের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে।
নোটবন্দি মামলা: ২০১৬ সালের নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে করা মামলায় বিচারপতি কান্ত সরকারের পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন। বাম দলগুলোর অভিযোগ, নোটবন্দি ছিল সাধারণ মেহনতি মানুষ ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের ওপর এক বড় আঘাত, যাকে বিচার বিভাগ আইনি বৈধতা দিয়েছে।
গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন:
তবে মুদ্রার উল্টো পিঠও আছে। পেগাসাস স্পাইওয়্যার দিয়ে নজরদারির অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন এবং ঔপনিবেশিক 'রাজদ্রোহ আইন' (Sedition Law) স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে বিচারপতি কান্তের ভূমিকা কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে। প্রগতিশীল মহলের প্রশ্ন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি কি পারবেন ইউএপিএ (UAPA) বা পিএমএলএ (PMLA)-র মতো কঠোর আইনের অপপ্রয়োগ রুখতে? নাকি তিনি শাসকের সুরেই কথা বলবেন?
আগামীর চ্যালেঞ্জ:
বামপন্থী বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারের আমলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৈরিকীকরণ, শ্রম কোড চালু করা এবং কর্পোরেট তোষণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ মানুষের শেষ ভরসা।
সিপিআই(এম) বা সিপিআই-এর মতো দলগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি, বিচার বিভাগকে হতে হবে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত। আগামী ১৫ মাসে বিচারপতি সূর্য কান্ত কি পারবেন নির্বাহী বিভাগের (Executive) ছায়া থেকে বেরিয়ে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে? নাকি তিনি কেবল 'স্ট্যাটাস কো' বা স্থিতাবস্থা বজায় রাখবেন? শ্রমজীবী মানুষ, কৃষক এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় তাঁর ভূমিকা কী হবে—সেদিকেই এখন কড়া নজর থাকবে দেশের বাম ও প্রগতিশীল সমাজের।