" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory ৫০০ বছরের প্রাচীন স্থাপত্য রহস্য: মাধ্যাকর্ষণকে চ্যালেঞ্জ লেপাক্ষী মন্দিরের 'ঝুলন্ত স্তম্ভ', নেপথ্যে কোন পদার্থবিদ্যা? //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

৫০০ বছরের প্রাচীন স্থাপত্য রহস্য: মাধ্যাকর্ষণকে চ্যালেঞ্জ লেপাক্ষী মন্দিরের 'ঝুলন্ত স্তম্ভ', নেপথ্যে কোন পদার্থবিদ্যা?



লেপাক্ষী, অন্ধ্রপ্রদেশ: ভারতের স্থাপত্য ইতিহাসে অন্ধ্রপ্রদেশের লেপাক্ষী বীরভদ্র মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই মন্দিরের মূল মণ্ডপে অবস্থিত একটি স্তম্ভ যুগের পর যুগ ধরে বিশ্বজুড়ে প্রকৌশলী ও পদার্থবিজ্ঞানীদের এক গভীর বিস্ময় হিসেবে টিকে রয়েছে – এটি হলো বিখ্যাত ‘ঝুলন্ত স্তম্ভ’ (Hanging Pillar)। এটি এমন এক বিরল স্থাপত্য কৌশল, যেখানে একটি বিশাল পাথরের স্তম্ভ মেঝেকে পুরোপুরি স্পর্শ না করেই ছাদের ভার বহন করছে বলে মনে হয়।


স্তম্ভের রহস্যময় অবস্থান


১৬শ শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের (Vijayanagara Empire) সময়কালে নির্মিত এই মন্দিরটি এর সূক্ষ্ম কারুকার্য এবং স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য পরিচিত। মন্দিরের মণ্ডপে প্রায় ৭০টি স্তম্ভের মধ্যে এই একটি স্তম্ভ একেবারেই ব্যতিক্রমী। খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, স্তম্ভটির তলদেশ এবং মেঝের মধ্যে একটি দৃশ্যমান ফাঁক রয়েছে। পর্যটকরা প্রায়শই এই ফাঁকের মধ্য দিয়ে একটি পাতলা কাপড় বা কাগজ পার করে এর শূন্যে ঝুলে থাকার প্রমাণ দেখেন। এই দৃশ্যই স্তম্ভটিকে ‘ভাসমান’ বা ‘ঝুলন্ত’ আখ্যা দিয়েছে, যা আপাতদৃষ্টিতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির স্বাভাবিক নিয়মকে অস্বীকার করে।



পদার্থবিদ্যা ও প্রকৌশলের মেলবন্ধন


এই স্তম্ভটি কেন মেঝের উপর ভর না দিয়েও স্থিতিশীল, তা নিয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর মূল কারণ হলো প্রাচীন ভারতীয় স্থপতিদের ওজন বন্টন (weight distribution) এবং স্থিতি ভারসাম্যের (static equilibrium) উপর উন্নত জ্ঞান।

১. ক্যান্টিলিভার নীতির প্রয়োগ: বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্তম্ভটি মূলত একটি ক্যান্টিলিভার বিমের (cantilever beam) মতো কাজ করে। সাধারণত ক্যান্টিলিভার বিম হলো এমন একটি কাঠামো, যার এক প্রান্ত দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে এবং অন্য প্রান্ত খোলা থাকে। লেপাক্ষীর ক্ষেত্রে, স্তম্ভটির উপরের অংশ মন্দিরের মূল কাঠামো, বিম এবং ছাদের স্ল্যাবগুলির সঙ্গে অত্যন্ত নিখুঁত ইন্টারলকিং (interlocking) ব্যবস্থার মাধ্যমে সংযুক্ত। এই শক্তিশালী বাঁধনের ফলে স্তম্ভটির সম্পূর্ণ ভার মেঝের উপর না পড়ে উপরের কাঠামো দ্বারা টেনে ধরে রাখা হয়।

২. ওজন বন্টন ও ভারসাম্য: মন্দিরটিতে থাকা অন্যান্য প্রায় ৭০টি স্তম্ভের সঙ্গে এই স্তম্ভটি একটি সামগ্রিক কাঠামোর অংশ। ছাদের ভার শুধুমাত্র এই একটি বা কয়েকটি স্তম্ভের উপর না দিয়ে একটি সুষম লোড ডিস্ট্রিবিউশন (uniform load distribution) পদ্ধতিতে সমস্ত স্তম্ভের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কৌশলের ফলেই একটি স্তম্ভ মেঝে থেকে সামান্য দূরত্ব বজায় রেখেও কাঠামোর সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম। আধুনিক প্রকৌশলের ভাষায়, এটি "স্থিতি ভারসাম্যের" এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। স্তম্ভটি আংশিকভাবে ভার গ্রহণ ও স্থানান্তরের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. নির্ভুল পরিমাপ এবং যাচাইকরণ: স্তম্ভটির নিচে সত্যিই ফাঁক আছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে ঐতিহ্যগতভাবে কাপড়ের পরীক্ষা ছাড়াও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা যেতে পারে। ফিলার গেজ (Feeler Gauge) বা অত্যন্ত সংবেদনশীল লেজার স্ক্যানিং (Laser Scanning) প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ক্ষুদ্র ফাঁকের সঠিক পরিমাপও করা যায়। এই ফাঁকটি সামান্য হলেও, এটি স্তম্ভটির ভারসাম্য রক্ষা এবং কাঠামোর সুনির্দিষ্ট নকশার অপরিহার্য অংশ।



বিতর্কিত তত্ত্ব এবং কিংবদন্তি


এই ঝুলন্ত স্তম্ভের উৎপত্তি নিয়ে একাধিক তত্ত্ব রয়েছে।

  • ইচ্ছাকৃত নকশা: একটি জনপ্রিয় ও জোরালো তত্ত্ব হলো, এই ভাসমান অবস্থাটি প্রাচীন বিজয়নগর স্থপতিদের ইচ্ছাকৃত নকশা ছিল। এটি তাদের উন্নত প্রকৌশলগত নৈপুণ্য প্রদর্শন এবং দর্শনার্থীদের মধ্যে বিস্ময় তৈরি করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

  • ভূমিকম্পের প্রভাব: আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী, স্তম্ভটি প্রাথমিকভাবে মেঝেকে স্পর্শ করেই ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক কারণ, বিশেষ করে কোনো হালকা ভূ-কম্পনের ফলে কাঠামোতে সামান্য পরিবর্তন আসে এবং স্তম্ভটি সামান্য সরে গিয়ে ঝুলে যায়। তবে এই তত্ত্বটি কিছুটা দুর্বল, কারণ মন্দিরের অন্যান্য স্তম্ভগুলি এখনও নিখুঁতভাবে সারিবদ্ধ রয়েছে।



জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে একজন ইঞ্জিনিয়ার এই রহস্য উন্মোচনের জন্য স্তম্ভটিকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন, যার ফলস্বরূপ মন্দিরের সামগ্রিক কাঠামোর স্থিতিশীলতা কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছিল। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, স্তম্ভটি দেখতে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও তা মন্দিরের কাঠামোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।

লেপাক্ষী মন্দিরের এই ঝুলন্ত স্তম্ভটি কেবল একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়, এটি প্রাচীন ভারতীয় প্রকৌশলীদের মেধা, দক্ষতা এবং পদার্থবিজ্ঞানের ব্যবহারিক জ্ঞানের এক জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রায় ৫০০ বছর পরও এই রহস্যময় স্তম্ভটি আমাদের সভ্যতার এক অমূল্য উত্তরাধিকার হিসেবে টিকে রয়েছে, যা বিজ্ঞান এবং কিংবদন্তির এক চমৎকার মিশ্রণ।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies