তিরুবনন্তপুরম: ১০ নভেম্বর ২০২৫
কেরলে সদ্য উদ্বোধন হওয়া আধুনিক ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী যাত্রায় স্কুল পড়ুয়াদের দ্বারা আরএসএস-এর 'গণ গীতম' (RSS anthem "Gana Geetham") গাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ঘটনার জেরে শিক্ষা ব্যবস্থার ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ লঙ্ঘনের অভিযোগে কড়া পদক্ষেপ নিল কেরল সরকার, যেখানে একটি বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত
ঘটনাটি ঘটেছিল গত ৮ নভেম্বর, কোচি থেকে বেঙ্গালুরুগামী এর্নাকুলাম-বেঙ্গালুরু বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী যাত্রার সময়। জানা যায়, কোচি শহরের সরস্বতী বিদ্য নিকেতন পাবলিক স্কুলের প্রায় ২০ জন ছাত্র এবং দুজন শিক্ষক এই যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। ট্রেনের কামরার মধ্যেই তারা আরএসএস-এর প্রশংসামূলক গানটি পরিবেশন করে, যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
শিক্ষামন্ত্রীর কড়া অবস্থান
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন কেরলের শিক্ষামন্ত্রী ভি শিবনকুট্টি। তিনি মন্তব্য করেন, 'শিশুদের রাজনীতিকরণ এবং একটি সরকারি ইভেন্টে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা প্রচার করা সাংবিধানিক নীতির গুরুতর লঙ্ঘন।' তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে সাংবিধানিক নীতি ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী দ্রুত ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশনস-কে (DPI) এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে স্কুলের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের প্রমাণ মিললে স্কুলটির নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) প্রত্যাহার করা হতে পারে বলেও তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও এই ঘটনাকে নিন্দনীয় বলে অভিহিত করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পক্ষ সমর্থন
কেরল সরকারের কড়া অবস্থানের বিপরীতে, রাজ্যের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এই বিতর্কিত কাজের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেশ গোপী এবং জর্জ কুরিয়ান গানটি পরিবেশনকে 'দেশপ্রেমমূলক উদযাপন' হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা গানে কোনও প্রকার চরমপন্থী সংযোগ থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন যে, এটি শিশুদের একটি সাধারণ দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন।
রেলওয়ের পদক্ষেপ ও তদন্তের লক্ষ্য
প্রাথমিকভাবে, দক্ষিণ রেলওয়ে এই গান গাওয়ার ভিডিওটি তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে শেয়ার করার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এর ফলে ভিডিওটি সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হলেও, পরে রেল কর্তৃপক্ষ এটিকে ইংরেজি অনুবাদ সহ পুনরায় পোস্ট করে এবং একে উদ্বোধনী যাত্রার সময় স্কুলের ছাত্রদের দ্বারা পরিবেশিত 'স্কুল সং' বলে বর্ণনা করে।
বর্তমানে কেরল সরকারের তদন্তের মূল লক্ষ্য হলো, ছাত্র-ছাত্রীদের এই গান গাওয়ার অংশগ্রহণ স্বেচ্ছামূলক ছিল, নাকি স্কুলের কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর কোনো প্রকার জোর বা চাপ সৃষ্টি করেছিল। এর পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ বজায় রাখা এবং শিশুদের রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখার নীতিগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরএসএস-এর গান নিয়ে তৈরি হওয়া এই ঘটনা বর্তমানে কেরলের বামপন্থী সরকার এবং কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি করেছে।