" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory নিউ ইয়র্কের মসনদে জোহরান: এক অভাবনীয় বিজয়ের ব্যবচ্ছেদ Progressive Wave: Zohran Mamdani Defeats Andrew Cuomo in Historic NYC Mayoral Upset //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

নিউ ইয়র্কের মসনদে জোহরান: এক অভাবনীয় বিজয়ের ব্যবচ্ছেদ Progressive Wave: Zohran Mamdani Defeats Andrew Cuomo in Historic NYC Mayoral Upset

 


নিউ ইয়র্ক সিটি: ২০২৫ সালের নভেম্বরের এক শীতের সন্ধ্যায়, যখন নিউ ইয়র্ক সিটি তার পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের ফলাফল জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, তখন এক নতুন ইতিহাস রচিত হলো। ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট এবং কুইন্সের অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি, শহরের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে হতবাক করে দিয়ে, নিউ ইয়র্কের ১১১তম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।[1][2] এই জয় কেবল একজন ব্যক্তির বিজয় নয়, এটি একটি আদর্শের, একটি প্রজন্মের এবং নিউ ইয়র্কের বহুধা বিভক্ত সমাজের এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা। মামদানি শুধু শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়রই নন, তিনি প্রথম মুসলিম এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যিনি এই পদে আসীন হলেন।[3][4] তার এই বিজয়কে সম্ভব করেছে তরুণ ভোটারদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ, তৃণমূল স্তরের এক শক্তিশালী আন্দোলন এবং শহরের ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ।[1][5][6]

এক অবিশ্বাস্য যাত্রার সূচনা

মাত্র এক বছর আগেও জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্কের রাজ্য রাজনীতিতে একজন পরিচিত মুখ হলেও, মেয়র পদের জন্য তাকে কেউ শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে গণ্য করেননি।[1] উগান্ডার কাম্পালায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া মামদানির শৈশব কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পরে সাত বছর বয়সে নিউ ইয়র্কে।[3][7] তার বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক এবং মা মীরা নায়ার একজন বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা।[7][8] ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্স এবং বোডোইন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক মামদানি, রাজনীতিতে প্রবেশের আগে একজন হাউজিং কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেছেন, যেখানে তিনি নিম্ন-আয়ের অভিবাসী পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের হাত থেকে বাঁচাতে সহায়তা করতেন।[3][7] এই অভিজ্ঞতা তাকে শহরের আবাসন সংকট এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন করে তোলে।

২০২০ সালে, তিনি নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে একজন দীর্ঘদিনের ডেমোক্রেটিক সদস্যকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন, যা ছিল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।[3][7] অ্যাসেম্বলিম্যান হিসেবে তিনি ট্যাক্সি চালকদের ঋণ মওকুফের জন্য অনশন ধর্মঘট এবং কয়েকটি বাস রুটে বিনামূল্যে যাতায়াতের পাইলট প্রোগ্রাম চালুর মতো পদক্ষেপের জন্য পরিচিতি লাভ করেন।[9]



 রণকৌশল: 

যখন মামদানি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন, তখন তার সামনে ছিলেন শহরের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের একজন, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো।[10][11] যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০২১ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া কুওমো এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করছিলেন।[10] অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে ছিলেন গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলসের প্রতিষ্ঠাতা কার্টিস স্লিওয়া, যিনি তার লাল বেরেট এবং অপরাধ দমনের অভিনব পদ্ধতির জন্য পরিচিত।[12]

কুওমোর প্রচারণা ছিল মূলত অভিজ্ঞতা এবং স্থিতিশীলতার উপর নির্ভরশীল। তিনি শহরের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং পুরোনো প্রজন্মের ডেমোক্রেটদের সমর্থন পেয়েছিলেন।[13] অন্যদিকে, মামদানির প্রচারণা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি নির্ভর করেছিলেন হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক, ক্ষুদ্র অঙ্কের অনুদান এবং সামাজিক মাধ্যমের কুশলী ব্যবহারের উপর।[1] তার মূল বার্তা ছিল নিউ ইয়র্ককে সাধারণ মানুষের জন্য আরও সাশ্রয়ী করে তোলা। তার প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল:

  • ভাড়া নিয়ন্ত্রণ: ভাড়া-স্থিতিশীল অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া বৃদ্ধি চার বছরের জন্য স্থগিত করা।[1][11]

  • সার্বজনীন শিশু পরিচর্যা: ৬ সপ্তাহ থেকে ৫ বছর বয়সী সকল শিশুর জন্য বিনামূল্যে শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা করা।[9]

  • বিনামূল্যে বাস পরিষেবা: শহরের সমস্ত বাসকে ভাড়া-মুক্ত করা।[9][11]

  • ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি: ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ৩০ ডলারে উন্নীত করা।[1][9]

  • সরকারি মুদি দোকান: খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য মোকাবেলায় শহর-পরিচালিত মুদি দোকান খোলা।[13]

এই প্রতিশ্রুতিগুলো, যা অনেক প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদের কাছে অবাস্তব মনে হয়েছিল, তা শহরের তরুণ, শ্রমজীবী এবং অভিবাসী ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।[1][14] যেখানে কুওমো তার অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরেছিলেন, সেখানে মামদানি তাকে অভিজাতদের প্রতিনিধি হিসেবে চিত্রিত করেছেন, যিনি সাধারণ মানুষের সমস্যা থেকে অনেক দূরে।[1]



বিরোধী শিবিরের ভুল এবং ট্রাম্প ফ্যাক্টর

এই নির্বাচনে অ্যান্ড্রু কুওমোর অতীত তার পিছু ছাড়েনি। যৌন হয়রানির অভিযোগগুলো তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।[1][10] অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া নির্বাচনে থাকলেও, তিনি কুওমো-বিরোধী ভোটকে বিভক্ত করে দিয়েছিলেন, যা পরোক্ষভাবে মামদানিকে সাহায্য করে।[15] অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, স্লিওয়া যদি প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতেন, তাহলে কুওমো হয়তো মামদানিকে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারতেন।

নির্বাচনের শেষ দিকে একটি অপ্রত্যাশিত মাত্রা যোগ করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মামদানিকে "কমিউনিস্ট" আখ্যা দিয়ে হুমকি দেন যে, মামদানি নির্বাচিত হলে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে।[14][16] ট্রাম্প এমনকি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান কুওমোকে ভোট দেওয়ার জন্য, কারণ তাকে "মন্দের ভালো" বলে মনে করেছিলেন।[14][17] কিন্তু এই হুমকি এবং হস্তক্ষেপ উল্টো ফল দেয়। এটি মামদানির সমর্থকদের আরও বেশি করে একত্রিত করে এবং তার প্রচারণাকে জাতীয় পর্যায়ে একটি প্রগতিশীল বনাম রক্ষণশীল লড়াইয়ের প্রতীকে পরিণত করে।[1]

ফলাফল: পরিবর্তনের পক্ষে গণরায়

নির্বাচনের দিনে নিউ ইয়র্ক সিটি কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি দেখেছে। প্রায় দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে একটি বড় অংশ ছিল তরুণ এবং প্রথমবারের ভোটার।[4][5][18] এই তরুণ ভোটারদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণই মামদানির বিজয়ের মূল চাবিকাঠি ছিল।[1][19][20] ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, মামদানি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, অন্যদিকে কুওমো প্রায় ৪১ শতাংশ এবং স্লিওয়া ৭ শতাংশের আশেপাশে ভোট পেয়েছেন।[6][18][21]

বিজয়ের তাৎপর্য এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

জোহরান মামদানির এই বিজয় নিউ ইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

প্রথমত, এটি শহরের রাজনৈতিক নেতৃত্বে বৈচিত্র্যের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। একজন মুসলিম মেয়রের নির্বাচন শহরের বহুসাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক বলিষ্ঠ স্বীকৃতি।

দ্বিতীয়ত, এই ফলাফল ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রগতিশীল শাখার এক বিরাট সাফল্য।[22] এটি প্রমাণ করে যে, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এবং সামাজিক সুরক্ষার বার্তা দিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করা সম্ভব।

তৃতীয়ত, এই জয় জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। রিপাবলিকানরা ইতোমধ্যেই মামদানিকে "উগ্র সমাজতন্ত্রের" প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে প্রচারণার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ইঙ্গিত দিয়েছে।[22]

তবে মেয়র হিসেবে মামদানির পথচলা সহজ হবে না। তার সামনে রয়েছে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ। তার উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজন হবে বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা। শহরের শক্তিশালী রিয়েল এস্টেট লবি, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং এমনকি ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যপন্থী অংশের কাছ থেকেও তিনি বাধার সম্মুখীন হতে পারেন।[23] তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, যে প্রগতিশীল জোট তাকে ক্ষমতায় এনেছে, তাদের প্রত্যাশা পূরণ করার পাশাপাশি শহরের সকল শ্রেণির মানুষের আস্থা অর্জন করে একটি বিভক্ত নগরীকে একত্রিত রাখা।

জোহরান মামদানির বিজয় একটি রূপকথার মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এটি নিউ ইয়র্কের মাটিতে ঘটে যাওয়া এক বাস্তব রাজনৈতিক বিপ্লব। তার সাফল্য বা ব্যর্থতার উপর শুধু নিউ ইয়র্ক সিটির ভবিষ্যৎই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল রাজনীতির গতিপথও অনেকাংশে নির্ভর করবে।

Google Search Suggestions
Display of Search Suggestions is required when using Grounding with Google Search. Learn more

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies