নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যের নারী সুরক্ষা ও সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার অধিকার পুনরুদ্ধারের ডাক দিয়ে কলকাতার ধর্মতলায় এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করল সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (AIDWA)। রবিবার সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য— উভয় সরকারের বিরুদ্ধেই তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন বামপন্থী মহিলা নেতৃত্ব।
জনসমুদ্রে লাল ঝাণ্ডার গর্জন
এদিন দুপুর থেকেই হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন এবং শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করে মহিলা কর্মীরা ধর্মতলার সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে শুরু করেন। স্লোগান আর লাল ঝাণ্ডায় মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা চত্বর। সম্মেলনে যোগ দিতে আসা প্রতিনিধিদের পাশাপাশি কয়েক হাজার সাধারণ শ্রমজীবী মহিলার উপস্থিতি সমাবেশের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়।
বৃন্দা কারাটের ভাষণ: কড়া ভাষায় আক্রমণ
সমাবেশের মূল আকর্ষণ ছিলেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য তথা এআইডিডব্লিউএ-র নেত্রী বৃন্দা কারাট। তিনি তাঁর ভাষণে বর্তমান পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে বলেন:
তৃণমূল সরকারের সমালোচনা: আরজি কর কাণ্ড এবং রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বাংলার মহিলারা আজ নিজের ঘরেও নিরাপদ নন। দোষীদের আড়াল করার যে সংস্কৃতি তৃণমূল তৈরি করেছে, তার বিরুদ্ধে গ্রাম-গঞ্জের মায়েদের রুখে দাঁড়াতে হবে।"
কেন্দ্রের মোদী সরকারকে তোপ: নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও রান্নার গ্যাসের দাম নিয়ে তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, "মোদী সরকার একদিকে ধর্মের রাজনীতি করছে আর অন্যদিকে গরিব মানুষের রেশন ও কাজ কেড়ে নিচ্ছে।"
ডাবল ইঞ্জিনের শোষণ: তিনি বলেন, "দিল্লিতে বুলডোজার সরকার আর বাংলায় সিন্ডিকেট রাজ— দুইই সাধারণ মানুষের শত্রু। এই অন্ধকার থেকে মুক্তির পথ হলো নারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।"
অন্যান্য বক্তাদের দাবি
সংগঠনের রাজ্য নেত্রী কণিনিকা ঘোষ এবং দেবলীনা হেমব্রমও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। তাঁরা দাবি করেন:
১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা অবিলম্বে মেটাতে হবে।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের চড়া সুদের ঋণের হাত থেকে বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগ নিতে হবে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে দুর্নীতির অবসান ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
সমাবেশ শেষে ধর্মতলা থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়। জেলা স্তরে এই লড়াইকে ছড়িয়ে দেওয়ার ডাক দিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে। রবিবারের এই বিশাল জমায়েতের জেরে মধ্য কলকাতার ট্রাফিক ব্যবস্থা দীর্ঘক্ষণ বিঘ্নিত হলেও মহিলা কর্মীদের উদ্দীপনা ছিল তুঙ্গে।




