নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ১৪ বছরের শাসন এবং কেন্দ্রে বিজেপির সাড়ে ১১ বছরের শাসনের জেরে বাংলার ঐতিহ্য ও অর্থনীতি আজ বিপন্ন। কৃষি থেকে শিল্প— সবক্ষেত্রেই রাজ্য পিছিয়ে পড়েছে। সিপিআই(এম)-এর ‘বাংলা বাঁচাও’ পদযাত্রায় অংশ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী।
বিপন্ন বাংলার সংস্কৃতি ও সম্প্রীতি
আভাস রায়চৌধুরী বলেন, "বাংলার রাজনীতিতে আগে কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে বাঙালি বা কে বিহারি— তা নিয়ে কোনো আলোচনা হতো না। কার পাতে আমিষ আর কার পাতে নিরামিষ, তা নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি বাংলার সংস্কৃতি নয়।" তিনি নবদ্বীপ ও চৈতন্যদেবের প্রসঙ্গ টেনে মনে করিয়ে দেন, ষোড়শ শতাব্দীতেই বাংলা জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষে মানুষে মিলনের বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু আরএসএস, বিজেপি এবং তৃণমূলের মিলিত প্রজেক্টে বাংলার সেই উদার, ধর্মনিরপেক্ষ এবং বহুত্ববাদী ইকো-সিস্টেমকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বাম আমল বনাম বর্তমান: পরিসংখ্যান পেশ
রাজ্যের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বাম জমানার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। আভাস বাবু দাবি করেন, "১৯৭৭ সালে জ্যোতি বসু যখন মুখ্যমন্ত্রী হন, তখন রাজ্যের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে ছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার যখন বিদায় নেয়, তখন ৭৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে উঠে এসেছিলেন।" তিনি আরও জানান, সেই সময় মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছিল, যা রাজ্যে শিল্পায়নের পথ প্রশস্ত করেছিল। কিন্তু গত ১৪ বছরে সেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নষ্ট করে রাজ্যকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
রুজি-রুটির সংকট ও দুর্নীতির অভিযোগ
সিপিআই(এম) নেতার অভিযোগ, বর্তমানে রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই, বেকারত্ব বাড়ছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ পরিযায়ী শ্রমিকে পরিণত হচ্ছেন। ফসলের দাম নেই, অথচ চাষের খরচ বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি। তিনি বলেন, "দিল্লির বিজেপি বা মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল রাজ্যে দুর্নীতির পাহাড় গড়েছে।"
বিকল্পের সন্ধান
আভাস রায়চৌধুরী স্পষ্ট করেন যে, ‘বাংলা বাঁচাও’ যাত্রার মূল লক্ষ্য হলো বাংলার হৃত সেক্যুলার ও ডেমোক্র্যাটিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। তিনি বলেন, "আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি, তাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমাদের ভাবনার মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে আগামী নির্বাচনে একটি বামপন্থী বিকল্পের প্রস্তাব তুলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য।"
আগামী দিনে এই পদযাত্রা রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে কতটা প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার।