" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory চিলির বুকে ফের সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন: জিনেট জারা ও শ্রমজীবী মানুষের 'মর্যাদা'র লড়াই //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

চিলির বুকে ফের সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন: জিনেট জারা ও শ্রমজীবী মানুষের 'মর্যাদা'র লড়াই

 


সান্তিয়াগো থেকে বিশেষ প্রতিবেদন:

আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে দাঁড়িয়ে চিলি আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে। সান্তিয়াগোর রাজপথ থেকে ভালপারিদিসোর বন্দর—বাতাসে এখন শুধুই পরিবর্তনের গুঞ্জন। এই নির্বাচন কেবল একটি ক্ষমতার পালাবদল নয়, এটি চিলির শ্রমজীবী মানুষের ‘মর্যাদা’ (Dignidad) পুনরুদ্ধারের লড়াই। ১৯৭৩ সালে সালভাদর আলেন্দেকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাতে চেয়েছিল স্বৈরাচারী পিনোশে সরকার, ২০২৫ সালে এসে সেই স্বপ্নই আবার ডানা মেলছে জিনেট জারার হাত ধরে।

একজন 'কমরেড' ও সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর

'ইউনিটি ফর চিলি' জোটের প্রার্থী জিনেট জারা কোনো সাধারণ রাজনীতিবিদ নন; তিনি চিলির শোষিত মানুষের হৃদস্পন্দন। তিনি সেই জিনেট জারা, যিনি ছাত্রাবস্থায় রাজপথে দাঁড়িয়ে শিক্ষার অধিকার চেয়েছেন, আর মন্ত্রী হয়ে শ্রমিকদের জন্য লড়েছেন। তার হাত ধরেই চিলির শ্রমিকরা পেয়েছে '৪০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ'—যা ছিল পুঁজিবাদের যাঁতাকলে পিষ্ট মানুষের জন্য এক টুকরো স্বস্তির নিঃশ্বাস।



বামপন্থী কর্মী এবং সমর্থকদের কাছে জারা কেবল একজন প্রার্থী নন, তিনি একজন 'কম্পানিয়েরা' (Compañera) বা সহযোদ্ধা। তার নির্বাচনী সমাবেশে যখন লাল পতাকা ওড়ে, তখন বৃদ্ধ শ্রমিকদের চোখে ভেসে ওঠে আলেন্দের মুখ। জারা যখন বলেন, "এই দেশটা কেবল ধনীদের নয়, এই দেশ সেই খনি শ্রমিকের, সেই শিক্ষকের, সেই মায়ের—যারা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে চিলিকে গড়েছেন," তখন জনসমুদ্রে আবেগের জোয়ার লাগে। এটি সাম্যের ডাক, এটি পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে মানবতার ডাক।

কাস্ট: ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়

জারার ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছেন হোসে আন্তোনিও কাস্ট। বামপন্থীদের চোখে কাস্ট কেবল একজন ডানপন্থী প্রার্থী নন, তিনি চিলির ইতিহাসের সেই কালো অধ্যায়ের প্রতীক, যেখানে ভিন্নমতকে বুটের তলায় পিষে ফেলা হতো। কাস্টের 'আইন ও শৃঙ্খলা'র স্লোগানকে চিলির প্রগতিশীল সমাজ দেখছে ভীতি প্রদর্শনের কৌশল হিসেবে। কাস্ট যখন অভিবাসন বা কঠোরতার কথা বলেন, তখন তা অনেকের মনে করিয়ে দেয় সেই স্বৈরাচারী দিনগুলোর কথা।

শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মতে, কাস্টের বিজয় মানেই ধনকুবেরদের স্বার্থরক্ষা এবং গরিবের অধিকার হরণ। তাই এবারের লড়াইটা সরাসরি—'ফ্যাসিবাদ বনাম সমাজতন্ত্রের', 'ভয় বনাম আশার'



স্বপ্ন এবং বাস্তবতার সংঘাত

নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে চিলির আবহাওয়ায় এক অদ্ভুত উত্তেজনা। একদিকে কাস্টের সমর্থকরা নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ভয়ের সংস্কৃতি ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে জারা শোনাচ্ছেন সমবণ্টন ও ন্যায়বিচারের গান। জারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এমন এক চিলির, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষা কোনো পণ্য হবে না, হবে নাগরিক অধিকার। তার ইশতেহারে উঠে এসেছে পিনোশে-আমলের সংবিধান পুরোপুরি মুছে ফেলে জনগণের সংবিধান গড়ার প্রত্যয়।

 ইতিহাসের দায়ভার

সালভাদর আলেন্দে তার শেষ ভাষণে বলেছিলেন, "শিগগিরই মহান সরণিগুলো (The great avenues) আবার খুলে যাবে, যেখান দিয়ে মুক্ত মানুষ হেঁটে যাবে একটি উন্নত সমাজ গড়তে।"

আজ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, সেই সরণিগুলো খোলার সময় এসেছে। জিনেট জারা যদি জয়ী হন, তবে তা কেবল একজন কমিউনিস্ট নারীর বিজয় হবে না; তা হবে লাতিন আমেরিকার বুকে শোষিত মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। এটি হবে প্রমাণ যে, বুলেট দিয়ে বিপ্লবকে সাময়িকভাবে থামানো গেলেও, মানুষের মুক্তির স্বপ্নকে হত্যা করা যায় না।

চিলির শ্রমজীবী মানুষ এখন শ্বাসরোধ করে অপেক্ষা করছে—তাদের ব্যালট কি পারবে ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিতে? নাকি আবারও অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারাবে আলেন্দের স্বপ্ন? উত্তর মিলবে ডিসেম্বরের এই মহাকাব্যিক লড়াইয়ে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies