নিজস্ব প্রতিবেদক | দিল্লি আরাবল্লী— শুধু একটি পাহাড়ের নাম নয়, এটি ভারতের এক প্রাচীন রক্ষাকবচ। প্রায় ২৫০ কোটি বছরের পুরনো এই পর্বতমালা আজ মানুষের লোভ আর অবহেলার শিকারে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ডঃ নেহা বিনওয়ালের একটি আবেগঘন ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমরা কোন ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়ে আছি।
কেন কাঁদছে আরাবল্লী?
যখন হিমালয়ের অস্তিত্ব ছিল না, তখন থেকেই আরাবল্লী দাঁড়িয়ে আছে এক অতন্দ্র প্রহরীর মতো। দিল্লি-এনসিআর, রাজস্থান ও গুজরাটের কোটি কোটি মানুষের জীবনের ভরসা এই পর্বত। কিন্তু নির্বিচারে খনন (Mining), অবৈধ বৃক্ষকর্তন আর অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে আমরা একে ক্ষতবিক্ষত করে চলেছি। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে রুক্ষ মরুভূমিকে আটকে রেখেছিল এই সবুজ পাহাড়, আর এখন সেই দেওয়াল ভেঙে পড়ছে।
একটি সরকারি নিয়ম ও প্রকৃতির মৃত্যুঘণ্টা
ডঃ বিনওয়াল তাঁর ভিডিওতে একটি ভয়াবহ সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। সরকারি কিছু নিয়ম অনুযায়ী, ১০০ মিটারের কম উচ্চতার পাহাড়কে আর ‘পাহাড়’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। কিন্তু উচ্চতায় ছোট হলেও এই পাহাড়গুলোর বাস্তুসংস্থানগত মূল্য অপরিসীম। এই ছোট ছোট টিলাগুলোই ভূগর্ভস্থ জল ধরে রাখে, বন্যপ্রাণীদের আশ্রয় দেয় এবং আবহাওয়াকে শান্ত রাখে। তাদের ‘পাহাড়’ মর্যাদা না দেওয়া মানেই হলো বুলডোজারের জন্য পথ প্রশস্ত করা।
পরিণতি কী হতে পারে?
মরুভূমির বিস্তার: আরাবল্লী না থাকলে থর মরুভূমির ধুলোবালি আর উত্তাপ সরাসরি গ্রাস করবে দিল্লি ও উত্তর ভারতকে।
জলের হাহাকার: আরাবল্লী অনেকটা স্পঞ্জের মতো কাজ করে যা বৃষ্টির জল শোষণ করে। এটি না থাকলে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নেমে যাবে।
নিশ্চিহ্ন বন্যপ্রাণ: নীলগাই, শেয়াল আর অসংখ্য দুর্লভ পাখির শেষ ঠিকানাটুকুও হারিয়ে যাবে।
আশার আলো ও আমাদের দায়িত্ব
তবে এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। ‘গ্রিন ওয়াল প্রজেক্ট’ বা বৃক্ষরোপণ অভিযানের মতো উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কিন্তু ডঃ বিনওয়ালের কথায়, শুধু সরকারি নীতি দিয়ে প্রকৃতি বাঁচানো সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন গণমানুষের চাপ এবং সচেতনতা।
ভিডিওর শেষে চোখের জলে নেহা বিনওয়াল আবেদন জানিয়েছেন— "আরাবল্লী বাঁচলে তবেই বাঁচবে ভারত, বাঁচবে আমাদের ভবিষ্যৎ।" আমরা কি পারব আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটু বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার মতো বাতাস আর এক গ্লাস স্বচ্ছ জল রেখে যেতে? নাকি উন্নয়নের এই অন্ধ দৌড়ে আমরাও হারিয়ে যাব ইতিহাসের ধূসর পাতায়?
সময় ফুরিয়ে আসছে। বাঁচান আরাবল্লীকে, বাঁচান আমাদের নিজেদের।


