নয়াদিল্লি: আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে আরও সুগম, দ্রুত ও নিরাপদ করতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক (MEA)। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য চালু হলো বহু প্রতীক্ষিত 'ই-পাসপোর্ট' (e-Passport) পরিষেবা। ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচির আওতায় এই নতুন ব্যবস্থা ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের সমতুল্য করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ই-পাসপোর্ট কী এবং কেন এটি বিশেষ?
সাধারণ পাসপোর্টের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের মূল পার্থক্য প্রযুক্তিতে। বাহ্যিক দিক থেকে এটি সাধারণ বুকলেটের মতো দেখতে হলেও, এর জ্যাকেটে বসানো থাকছে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির ইলেকট্রনিক চিপ (Radio-Frequency Identification বা RFID)। এই চিপের মধ্যেই সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা-সহ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির মতো গুরুত্বপূর্ণ বায়োমেট্রিক তথ্য। আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO)-র মানদণ্ড মেনেই এই পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
সুরক্ষা ব্যবস্থায় বড় আপগ্রেড:
ই-পাসপোর্টের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। এতে ব্যবহৃত চিপটি এমনভাবে তৈরি, যা কপি করা বা নকল করা প্রায় অসম্ভব। বিদেশ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, কেউ যদি চিপটির সঙ্গে কোনো রকম কারচুপি (Tampering) করার চেষ্টা করে, তবে পাসপোর্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অচল হয়ে যাবে। এর ফলে পাসপোর্ট জালিয়াতি ও পরিচয় চুরির (Identity Theft) মতো অপরাধ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
আবেদন পদ্ধতি ও যোগ্যতা:
প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন প্রক্রিয়ায় বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যে কোনো ভারতীয় নাগরিক সাধারণ পাসপোর্টের মতোই নিম্নলিখিত ধাপে আবেদন করতে পারবেন:
১. সরকারি ওয়েবসাইট portal2.passportindia.gov.in-এ লগ-ইন করে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
২. অনলাইনেই নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হবে।
৩. এরপর নিকটবর্তী পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে (PSK) অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করে নথিপত্র যাচাই ও বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে।
আবেদন ফি বা খরচ:
নতুন এই প্রযুক্তিসম্পন্ন পাসপোর্টের জন্য নাগরিকদের ওপর অতিরিক্ত কোনো আর্থিক বোঝা চাপানো হচ্ছে না। সাধারণ পাসপোর্টের মতোই এর ফি নির্ধারণ করা হয়েছে:
৩৬ পাতার সাধারণ পাসপোর্টের জন্য: ১,৫০০ টাকা।
৬০ পাতার জাম্বো পাসপোর্টের জন্য: ২,০০০ টাকা।
তৎকাল (Tatkal) পরিষেবার জন্য অতিরিক্ত ফি প্রযোজ্য হবে।
ভ্রমণকারীদের সুবিধা:
ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার ফলে ভারতীয় পর্যটকদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ হবে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত বিমানবন্দরে ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য আলাদা 'ই-গেট' (e-gates) থাকে। সেখানে দীর্ঘ লাইনে না দাঁড়িয়ে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে পাসপোর্ট স্ক্যান করেই দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যাবে।
কবে থেকে পাওয়া যাবে?
প্রাথমিক পর্যায়ে ভুবনেশ্বর ও নাগপুর-সহ নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রে এই পরিষেবা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই সারা দেশের সমস্ত পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র থেকে এই সুবিধা পুরোদমে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বর্তমান পাসপোর্টধারীরা তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে রিনিউ করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-পাসপোর্ট পাবেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি