মুম্বাই: ইতালিতে যে কারখানাটি লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়েছিল এবং যা সেদেশের আদালত বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই একই কারখানার যন্ত্রপাতি এখন ভারতের মহারাষ্ট্রে। রত্নগিরির লোটে পরশুরাম শিল্পাঞ্চলে এই কারখানার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে, যা নিয়ে পরিবেশবিদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
মিটেনি কারখানার ইতিহাস ও ইতালির বিপর্যয়
ইতালির ভিচেঞ্জা (Vicenza) শহরে অবস্থিত মিটেনি (Miteni) নামক একটি কেমিক্যাল কারখানা কয়েক দশক ধরে PFAS (Per- এবং Polyfluoroalkyl Substances) নামক এক ধরণের রাসায়নিক উৎপাদন করত। এই রাসায়নিকগুলো পরিবেশে কখনো নষ্ট হয় না বলে এদের ‘ফরেভার কেমিক্যালস’ (Forever Chemicals) বলা হয়।
২০১৮ সালে এই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য স্থানীয় পানীয় জলের উৎসে মিশে যাওয়ার ফলে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, সেখানকার বাসিন্দাদের রক্তে এই বিষাক্ত কেমিক্যালের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি। এর ফলে ক্যান্সার, লিভারের সমস্যা এবং প্রজনন ক্ষমতার হ্রাসের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দেয়। পরবর্তীতে ইতালির আদালত কারখানাটি বন্ধ করে দেয় এবং ১১ জন কর্মকর্তাকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
ভারতে যেভাবে এল এই কারখানা
ইতালিতে বন্ধ হওয়ার পর এই কারখানার সমস্ত যন্ত্রপাতি নিলামে তোলা হয়। ভারতের লক্ষ্মী অর্গানিকস (Laxmi Organics) নামক একটি সংস্থা তাদের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ভিভা লাইফ সায়েন্স (Viva Lifesciences) এর মাধ্যমে এই সব যন্ত্রপাতি কিনে নেয় এবং মুম্বাইয়ের কাছে রত্নগিরিতে নিয়ে আসে।
উদ্বেগের মূল কারণসমূহ
PFAS-এর ভয়াবহতা: এই রাসায়নিক একবার শরীরে বা পরিবেশে প্রবেশ করলে তা হাজার বছরেও শেষ হয় না। এটি সরাসরি ডিএনএ এবং হরমোনের ক্ষতি করতে পারে।
আইনি ফাঁকফোকর: ভারতে বর্তমানে PFAS নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কঠোর আইন নেই। ইতালিতে যেখানে এই কেমিক্যাল নিষিদ্ধ বা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, ভারতে সেই আইনি সুযোগ নিয়েই কারখানাটি স্থাপন করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি: রত্নগিরির কোঙ্কন উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ অত্যন্ত সংবেদনশীল। এখানে এই ধরণের কারখানার উপস্থিতি স্থানীয় কৃষি, মৎস্য এবং মানুষের জীবনের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই সরব হয়েছেন। অনেকের মতেই, “ইউরোপ যে বিষ বর্জন করেছে, ভারত কেন তা নিজের দেশে সাদরে গ্রহণ করছে?” পরিবেশ কর্মীদের আশঙ্কা, সঠিক নজরদারি না থাকলে এটি ভারতের জন্য আরেকটি ‘ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি’র মতো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।


