নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক মেরুকরণের যুগে যা কল্পনা করাও কঠিন, তেমন এক অভাবনীয় ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল ১৯৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি। সেদিন রাজপথে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও জোটের ডাকা মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
প্রেক্ষাপট: ২৪ জানুয়ারির চট্টগ্রাম ট্র্যাজেডি
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসভায় যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। আওয়ামী লীগের দলীয় তথ্যমতে, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো এই হামলায় প্রায় ৮০ জন নেতাকর্মী নিহত হন (যদিও সরকারি ও বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ভিন্ন)। এই নৃশংস ঘটনাটি ইতিহাসে 'চট্টগ্রাম গণহত্যা' বা 'চট্টগ্রাম ট্র্যাজেডি' নামে পরিচিত।
২৬ জানুয়ারির সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত
এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ২৬ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় তৎকালীন ৮-দলীয় জোট। সেই উত্তাল সময়ে এক রহস্যময় কারণে শেখ হাসিনা সমাবেশে উপস্থিত হতে না পারলেও, সবাইকে চমকে দিয়ে শহীদ মিনারে হাজির হন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি কেবল উপস্থিতই হননি, বরং শেখ হাসিনার ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং এরশাদ সরকারের পতনের দাবিতে আয়োজিত সেই বিশাল বিক্ষোভ মিছিলের সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন। রাজপথের সেই ছবি আজও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনন্য দলিল হয়ে আছে।
রাজনৈতিক গুরুত্ব
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আশির দশকের সেই সময়টি ছিল এরশাদবিরোধী আন্দোলনের তুঙ্গ মুহূর্ত। আদর্শিক ভিন্নতা থাকলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে দুই প্রধান নেত্রীর এই পরোক্ষ সংহতি আন্দোলনকে বেগবান করেছিল।
আজকের দিনে এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জাতীয় সংকটে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে একসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যক্তিগত ও দলীয় রেষারেষির ঊর্ধ্বে ওঠার সংস্কৃতি বিদ্যমান ছিল।


