মৃত্যু যাকে হার মানাতে পারেনি: ১৭ বছরের কিশোরী লেপা রাদিচের অমর উপাখ্যান
গলায় ফাঁসির দড়ি নিয়েও যিনি নাৎসিদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছিলেন— আজ তার শততম জন্মবার্ষিকী।
স্টাফ রিপোর্ট, ভিউজ নাও
৩ মিনিট পাঠ | ইতিহাস ও রাজনীতি
১৯৪৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। উত্তর বসনিয়ার ছোট শহর বোসানস্কা ক্রুপা। চারদিকে নাৎসিদের ভারী বুটের শব্দ আর হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। সেখানে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিল ১৭ বছরের এক কিশোরী। তার দু’হাত পেছন থেকে বাঁধা, কিন্তু মেরুদণ্ড তখনো সোজা। তার নাম লেপা রাদিচ। নাৎসি বাহিনী তাকে শেষবারের মতো জীবনের প্রলোভন দেখিয়েছিল— ‘বন্ধুদের নাম বলো, তোমাকে ছেড়ে দেব।’ লেপা শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাসঘাতক নই। আমার বন্ধুদের চিনতে পারবে তখনই, যখন তারা আমার হত্যার প্রতিশোধ নিতে তোমাদের নিশ্চিহ্ন করতে আসবে।”
সংগ্রামের শুরু: ১৫ বছরেই যুদ্ধের ময়দান
লেপা রাদিচের জন্ম ১৯২৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর। তিনি যখন বড় হচ্ছিলেন, তখন ইউরোপে ফ্যাসিবাদের কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। ১৯৪১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি তাঁর বোন দারা-র সাথে যুগোস্লাভিয়ার ‘পার্টিজান’ বাহিনীতে যোগ দেন। এটি ছিল নাৎসি ও তাদের দোসর উস্তাশে বাহিনীর বিরুদ্ধে এক অদম্য প্রতিরোধ। কিশোরী লেপা কেবল যুদ্ধের ময়দানে লড়েননি, তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ সেবিকা এবং শরণার্থীদের রক্ষাকর্তা।
Visual Analysis: The Final Stand Odds (1943)
Comparing forces involved in the rescue of 150 refugees
১৫০ জন শরণার্থীর রক্ষক
১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নাৎসিদের বিখ্যাত ‘প্রিন্স ইউজেন’ এসএস ডিভিশন যখন বসনিয়ার গ্রামে গ্রামে হামলা চালায়, তখন লেপার দায়িত্ব ছিল দেড়শ নারী ও শিশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু নাৎসিরা তাদের ঘিরে ফেলে। লেপা রাদিচ পিছু হটেননি। নিজের রাইফেলের শেষ বুলেটটি থাকা পর্যন্ত তিনি লড়াই চালিয়ে যান। বুলেট ফুরিয়ে গেলে তিনি সহযোদ্ধাদের ডাক দিয়ে বলেছিলেন, “খালি হাতেই লড়াই করো!” জার্মান সেনারা যখন তাঁকে ধরে ফেলে, তখন রাইফেলের কুঁদো দিয়ে তাঁকে এমনভাবে পেটানো হয়েছিল যে তাঁর পুরো শরীর রক্তে ভিজে গিয়েছিল।
“ফাঁসির মঞ্চে লেপার সেই নির্ভীক চাউনি পরবর্তীকালে এক মৃত জার্মান সেনার পকেটে পাওয়া ছবির মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এটি হয়ে ওঠে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাহসের চিরন্তন বিজ্ঞাপন।”
Life Distribution: The Stolen Youth
A quantitative breakdown of Lepa's 17 years of existence. Notice how 15% of her entire life was spent in high-intensity guerrilla warfare.
- Peaceful Childhood (1925-1941)
- Active Resistance (1941-1943)
ইতিহাসের পাতায় লেপা
লেপা রাদিচ আজ কেবল বসনিয়ার বা যুগোস্লাভিয়ার বীর নন, তিনি সারাবিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। ১৯৫১ সালে তাকে মরণোত্তর ‘পিপলস হিরো’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। আজকের এই দিনে যখন সারা বিশ্ব উগ্রবাদ এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়ছে, তখন লেপার সেই শেষ কথাগুলো আমাদের কানে বাজে— ‘স্বাধীনতা রক্তের চেয়েও দামী’।




