মুম্বাই, ভারত: আজকের ব্যস্ত মুম্বাইয়ের রাস্তার মোড়ে মোড়ে যে গরম গরম মাখন-মাখানো পাভ ভাজির সুবাস পাওয়া যায়, তার জন্মের পেছনে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার শ্রমিকের ঘাম, এক সুদূর বিদেশের যুদ্ধ এবং বেঁচে থাকার এক চরম লড়াই। ১৮৬১ সাল—সময়টা যখন ভারতের বোম্বাই (বর্তমান মুম্বাই) আর সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের আমেরিকা এক সুতোয় বাঁধা পড়েছিল।
যখন সাত সমুদ্র পারের যুদ্ধ বদলে দিল ভারতের রান্নাঘর
১৮৬১ সালে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ (Civil War) শুরু হলে সারা বিশ্বে তুলোর যোগান বন্ধ হয়ে যায়। সেই অভাব মেটাতে বোম্বাইয়ের টেক্সটাইল মিলগুলোতে কাজের চাপ বেড়ে যায় বহুগুণ। মিলের চিমনিগুলো দিনরাত ধোঁয়া ছাড়ছে, আর ভেতরে হাজার হাজার শ্রমিক বিরামহীন কাজ করে চলেছেন। তাঁদের পকেটে হয়তো পয়সা ছিল, কিন্তু খাওয়ার মতো সময় ছিল না। মিলের মালিকদের কড়া নির্দেশ—দ্রুত কাজ শেষ করে আবার মেশিনে ফিরতে হবে।
গোপালের উদ্ভাবন: খিদের সাথে লড়াই
গোপাল নামে এক সামান্য রাঁধুনি দেখেছিলেন ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের সেই হাহাকার। হাতে সময় কম, তাই রুটি বেলার সময়টুকুও নেই। তিনি কী করবেন? তিনি ফেলে দেওয়া বা বেঁচে যাওয়া সব সবজি এক জায়গায় করে তপ্ত তলোয়ারের মতো এক হাতল দিয়ে সেগুলোকে পিষতে শুরু করলেন। তৈরি হলো এক বিশেষ মিশ্রণ—'ভাজি'।
সেই ভাজিকে সহজেই গিলে ফেলার জন্য তিনি বেছে নিলেন পর্তুগিজদের আনা নরম 'পাভ'। মাখনে সেই পাভ সেঁকে তিনি তুলে দিলেন পরিশ্রান্ত শ্রমিকদের হাতে। শ্রমিকরা দ্রুত সেই খাবার খেয়ে আবার ফিরে যেতেন তাঁদের যন্ত্রের লড়াইয়ে।
এক প্লেট খাবারে বেঁচে থাকার গল্প
সেদিন সেই ধোঁয়াময় মিলের সামনে বসে শ্রমিকরা যখন সেই গরম ভাজি আর পাভ মুখে তুলেছিলেন, তা কেবল তাদের পেট ভরায়নি, দিয়েছিল বেঁচে থাকার রসদ। আজ সেই খাবার মুম্বাইয়ের পরিচয় হতে পারে, কিন্তু তার প্রতিটি দানা আজও মনে করিয়ে দেয় সেই সংগ্রামকে, যেখানে খিদের কাছে হার না মানার এক ইতিহাস লেখা হয়েছিল।
"সেদিন সেই খাবার ছিল এক বাধ্যবাধকতা, কিন্তু আজ তা কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা। মুম্বাইয়ের প্রতিটি পাভ ভাজির প্লেটে আজও যেন সেই পরিশ্রমী শ্রমিকদের ঘামের গন্ধ মিশে আছে।"


