কলকাতা, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫: ফুটবলের মক্কা কলকাতা সেজেছিল রাজকীয় সাজে। স্বপ্ন ছিল একটাই—ফুটবল ঈশ্বর লিওনেল মেসিকে বরণ করে নেওয়া। কিন্তু গত ১৩ই ডিসেম্বর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই স্বপ্নের বদলে সঙ্গী হয়েছিল একরাশ লজ্জা আর বিশৃঙ্খলা। আর সেই অব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ 'নৈতিক দায়' কাঁধে নিয়ে, এবং রাজপথে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে এবার পদত্যাগ করলেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের হাতে লেখা ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন অরূপ বিশ্বাস। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, সল্টলেক স্টেডিয়ামে মেসিকে ঘিরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার গাফিলতি দেখা গেছে, তার দায় তিনি এড়াতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিত তদন্ত যাতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয়, সেই কারণেই তিনি নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছেন।
তবে এই পদত্যাগের নেপথ্যে ছিল গত কয়েকদিনের উত্তাল রাজপথ। ১৩ই ডিসেম্বরের সেই অভিশপ্ত সন্ধ্যার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিল গোটা বাংলা। একদিকে বাম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই (DYFI) এই চরম অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে তীব্র বিক্ষোভে সামিল হয়। অন্যদিকে, বাংলার সাধারণ ক্রীড়াপ্রেমী মানুষেরাও আবেগের অবমাননা মেনে নিতে পারেননি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজপথ—সর্বত্রই ক্রীড়ামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন তাঁরা। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই দ্বিমুখী চাপে এবং প্রবল জনরোষের কারণেই শেষ পর্যন্ত নৈতিকতার খাতিরে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন অরূপ বিশ্বাস।
টিকিট হাতে নিয়েও হাজার হাজার দর্শকের স্টেডিয়ামে ঢুকতে না পারা এবং ভিড়ের চাপে সাধারণ মানুষের হেনস্থা হওয়ার ঘটনায় বিরোধীরা আগেই সরব হয়েছিল। খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ক্রীড়ামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ঘটনার পর থেকেই গভীর অনুশোচনায় ভুগছিলেন তিনি। যে শহর ফুটবলকে ধর্মের মতো পুজো করে, সেখানে এমন কেলেঙ্কারি রাজ্যের ভাবমূর্তিতে বড়সড় দাগ লাগিয়েছে—এমনটাই মনে করছেন তিনি।
আপাতত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এই ইস্তফাপত্র গ্রহণ করবেন কি না, তা নিয়ে নবান্ন থেকে চূড়ান্ত কোনো ঘোষণা আসেনি। কিন্তু অরূপ বিশ্বাসের এই সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দিল, মেসিকাণ্ডের জল কতদূর গড়িয়েছে। উৎসবের আনন্দ মিলিয়ে গেছে, এখন পড়ে রইল কেবল বিতর্ক, বিক্ষোভ আর এক মন্ত্রীর পদত্যাগের নাটকীয় মোড়।


