" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory মৃতপ্রায় কারখানার ধোঁয়ায় আজ জীবনের ঘ্রাণ—শিশুর হাসিতে আগামীর স্বপ্ন বুনে শেষ হলো লাল পতাকার ঐতিহাসিক পদযাত্রা //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

মৃতপ্রায় কারখানার ধোঁয়ায় আজ জীবনের ঘ্রাণ—শিশুর হাসিতে আগামীর স্বপ্ন বুনে শেষ হলো লাল পতাকার ঐতিহাসিক পদযাত্রা

 





নিজস্ব প্রতিবেদন, দুর্গাপুর, ১৩ই ডিসেম্বর:

শীতের রুক্ষ বাতাসে যখন দুর্গাপুরের চিমনিগুলো ধুঁকছে, যখন ইস্পাত নগরীর প্রতিটি ইটে লেখা হচ্ছে অনিশ্চয়তার গল্প, ঠিক তখনই রাজপথে নেমে এল এক জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। আজ, ১৩ই ডিসেম্বর, পশ্চিম আকাশে সূর্য যখন অস্তগামী, দুর্গাপুরের মাটি তখন সাক্ষী থাকল এক নতুন সূর্যোদয়ের প্রতিশ্রুতির। ‘বাংলা বাঁচাও’—স্রেফ দুটি শব্দ নয়, গত সাত দিন ধরে এই শব্দবন্ধটি হয়ে উঠেছিল পশ্চিম বর্ধমানের মেহনতি মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র মন্ত্র। আজ তার শেষ দিনে, দুর্গাপুরের পিচঢালা কালো রাস্তা ঢেকে গেল লাল পতাকার রক্তিম আবিরে, আর বাতাসে ভাসল হাজারো কণ্ঠের এক বুকফাটা আর্তি ও প্রতিরোধের শপথ।



‘ভিটেমাটি আমার, রুজি আমার’—ইস্পাত নগরীর কান্না ও গর্জন


সকাল তখনো ভালো করে ফোটেনি, ভারতী মোড়  চত্বর ভেসে যাচ্ছিল মানুষের ঢলে। নেতৃত্বে ছিলেন  প্রবীণ সেনানী বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্তোষ দেবরায় এবং সিটু নেতা ললিত মোহন মিশ্র। কিন্তু আজকের মিছিলের ভাষা ছিল আলাদা। যখন ১০ কিলোমিটার পথ হেঁটে মিছিলটি ইস্পাত নগরীর আবাসনগুলোর (Steel Township) পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধের ঘোলাটে চোখে ছিল জল, আর মুষ্টিবদ্ধ হাতে ছিল সমর্থন।








কেন্দ্রের বিরাষ্ট্রীয়করণের খাঁড়া আর নতুন লেবার কোডের জাঁতাকলে পিষ্ট শ্রমিক আজ বুঝেছে, এ লড়াই শুধু মাইনে বাড়ানোর নয়, এ লড়াই নিজের অস্তিত্ব রক্ষার। ‘আবাসন বাঁচাও’-এর ডাক যখন উঠল, তখন মনে হলো—এ তো রাজনৈতিক স্লোগান নয়, এ যেন ঘর হারানো আশঙ্কায় থাকা মানুষের বুকের গভীরতম দীর্ঘশ্বাস। প্রতিটি পদক্ষেপ আজ কম্পিত করেছে শাসকের মসনদকে, জানিয়ে দিয়েছে—দুর্গাপুর মরে যায়নি, দুর্গাপুর লড়তে জানে।


বারুদের গন্ধে ফুলের সুবাস: ঐশী ঘোষ ও এক টুকরো শৈশব


রাজনীতির ময়দান মানেই কি কেবল রুক্ষতা? আজকের পদযাত্রা সেই মিথ ভেঙে দিল। মিছিলের পুরোভাগে গত সাত দিন ধরে যিনি অক্লান্ত হাঁটছেন, সেই ছাত্রনেত্রী ঐশী ঘোষ আজ হয়ে উঠলেন মিছিলের হৃদস্পন্দন। স্লোগানে স্লোগানে যখন চারিদিক প্রকম্পিত, ঠিক তখনই মিছিলের গতি ধীর হলো। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একদল শিশুর কৌতূহলী চোখের সামনে থমকে দাঁড়ালেন ঐশী।





মুহূর্তের জন্য ভুলে গেলেন রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখরাঙানি, ভুলে গেলেন মাইলের পর মাইল হাঁটার ক্লান্তি। ধুলোমাখা পথেই শিশুদের জড়িয়ে ধরলেন তিনি, মেতে উঠলেন হাসি-ঠাট্টায়। ওই শিশুদের নিষ্পাপ হাসির দিকে তাকিয়ে যেন অজান্তেই হাজারো মানুষ শপথ নিলেন—"আমাদের যা হওয়ার হয়েছে, কিন্তু এই শিশুদের ভবিষ্যৎ আমরা নষ্ট হতে দেব না।" ঐশীর এই মমতাময়ী রূপ আর শিশুদের খিলখিল হাসি যেন আজ ইস্পাত নগরীর সবথেকে বড় রাজনৈতিক দলিল হয়ে রইল। এই লড়াই তো আসলে ওদেরই জন্য, ওদের মুখে অন্ন আর চোখে স্বপ্ন তুলে দেওয়ার জন্য।


গ্রাম ও শহরের মহামিলন: রঘুনাথপুরের পথে





বিকেলের পড়ন্ত আলোয় পদযাত্রা যখন আশিষ জব্বর স্মৃতি ভবন থেকে রঘুনাথপুরের গ্রাম্য পথে প্রবেশ করল, তখন দেখা গেল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। শহুরে শ্রমিক আর গ্রামের কিষাণ—আজ একাকার। সাম্প্রদায়িকতার বিষ আর দুর্নীতির অন্ধকারের বিরুদ্ধে গ্রামের মায়েরা শাঁখ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে বরণ করে নিলেন ঘরের ছেলেমেয়েদের। লাল ঝাণ্ডা আজ গ্রামের মেঠো পথে কেবল একটি দলীয় পতাকা নয়, হয়ে উঠল ভরসার এক চওড়া ছাদ।


আগামীর অপেক্ষা: এক মহাজাগরণের ডাক


সন্ধ্যা নামল। সাত দিনের দীর্ঘ পদযাত্রা শেষ হলো। কিন্তু এ শেষ নয়, এ এক নতুন শুরুর ইঙ্গিত। আগামীকাল, ১৪ই ডিসেম্বর, দুর্গাপুর প্রস্তুত হচ্ছে এক ঐতিহাসিক জনসমুদ্রের সাক্ষী হতে। যেখানে গর্জন করবেন মহম্মদ সেলিম, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। আজকের এই আবেগের বিস্ফোরণ বলে দিচ্ছে, আগামীকালের সমাবেশ কেবল ভিড় হবে না, তা হবে শোষিতের ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ।






আজ রাতে যখন দুর্গাপুরের শ্রমিক কলোনিতে আলো নিভে আসবে, তখনো হাজারো মানুষের বুকে জ্বলবে আশার প্রদীপ। কারণ, আজ তারা রাস্তায় নেমে দেখেছিল—তারা একা নয়। বাংলা বাঁচাতে, নিজের ঘর বাঁচাতে, আর ওই শিশুদের হাসি বাঁচাতে—লড়াই জারি আছে, লড়াই জারি থাকবে।



#BanglaBachao #EmotionalDurgapur #CPIM #AisheGhosh #HopeForFuture #SaveBengal #DurgapurDiaries #WorkersResistance

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies