নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা
শীতের সকালের কুয়াশা তখনও কাটেনি। গঙ্গার ঘাটে কিংবা কোনো নির্মাণাধীন ইমারতের তপ্ত ধুলোয় যখন আমাদের চারপাশ ঢেকে যায়, তখনই একদল নারীকে দেখা যায় মাথায় ঝুড়ি নিয়ে জীবনের ঘানি টানতে। তাঁদের ঘাম মুছে দেওয়ার কেউ নেই, বরং তাঁদের শ্রমে গড়ে ওঠে এই সভ্যতার অট্টালিকা। কিন্তু দিনের শেষে যখন পারিশ্রমিক গোনার সময় আসে, তখন অদৃশ্য এক বিভেদ রেখা তাঁদের স্বপ্নকে ছোট করে দেয়।
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে এক লড়াকু নারীকে, যাঁর দুই হাতে ধরা ভারী ঝুড়ি আর চোখে আগামীর অনিশ্চয়তা। অথচ এই কঠিন পরিশ্রমই তাঁর জীবনের একমাত্র সম্বল। কাজের জায়গায় পুরুষ সহকর্মীর সমান ঘাম ঝরিয়েও কেন তাঁদের পকেটে কম টাকা আসবে? কেন লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে তাঁদের শ্রমকে খাটো করে দেখা হবে? এই প্রশ্নগুলোই আজ গর্জে উঠেছে বাংলার রাজপথে।
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য) এই বঞ্চনার বিরুদ্ধেই তাঁদের ৩০তম সম্মেলনে ডাক দিয়েছেন। তাঁদের স্পষ্ট দাবি— "কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হবে" এবং "সম কাজে সম বেতন দিতে হবে"।
আগামী ২১ থেকে ২৩ ডিসেম্বর চলবে এই সম্মেলন। তবে মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ২১শে ডিসেম্বর দুপুর ১:৩০ মিনিটের ধর্মতলার প্রকাশ্য সমাবেশ। ওইদিন ধর্মতলার রাজপথ সাক্ষী থাকবে হাজার হাজার নারীর পদধ্বনির। যারা ঘরে উনুন জ্বালাতে জানেন, আবার অধিকার বুঝে নিতে মিছিলে হাঁটতেও জানেন।
ছবিটি শুধু একটি প্রচারপত্র নয়, এটি সেই নাম না জানা কোটি কোটি শ্রমজীবী মহিলার নীরব যন্ত্রণার দলিল। ওই ঝুড়িটি কি কেবল পাথরের? নাকি ওতে চেপে আছে হাজারো না বলা কথা, সন্তানের পড়ার খরচ আর একবেলার আহারের দুশ্চিন্তা?
সংগঠনের পক্ষ থেকে আবাহন জানানো হয়েছে— "দলে দলে যোগ দিন"। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক সমাবেশ নয়, এটি সামাজিক স্বীকৃতির লড়াই। এটি সেই মায়ের লড়াই, যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেও পূর্ণ মর্যাদা পান না।
শহরের রাজপথে যখন ঐদিন স্লোগান উঠবে, তখন হয়তো গঙ্গার ধারের ওই শ্রমজীবী বোনটি এক মুহূর্তের জন্য মাথা তুলে আকাশ দেখবেন। ভাববেন, তাঁর হয়েও কেউ কথা বলছে। অধিকারের এই লড়াই কি পারবে বাংলার এই পরিশ্রমী মুখগুলোতে সম্মানের হাসি ফোটাতে? উত্তর মিলবে আগামী ২১শে ডিসেম্বর, ধর্মতলার জনসমুদ্রে।


