গাজা, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ – যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার আকাশে এখন বারুদের ধোঁয়া নেই, কিন্তু সেখানে নেমে এসেছে নতুন এক বিপর্যয়। প্রচণ্ড শীতকালীন ঝড় "স্টর্ম বাইরন"-এর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে গাজার বাস্তুচ্যুতদের শিবিরগুলো। আকাশ থেকে অবিরাম ঝরছে বৃষ্টি, যা এখন গাজাবাসীর কাছে প্রকৃতির কান্না হয়ে ধরা দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল—অস্থায়ী তাঁবুগুলো—এখন পানির নিচে।
খান ইউনিসে মানবিক বিপর্যয়
খান ইউনিসের একটি শিবিরে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিশ্ববিবেকের কাছে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেজার আবু জাজার নামের এক অসহায় মা তার আট মাসের শিশুকন্যা রাহাফকে হারিয়েছেন। প্রবল শীতে তাঁবু ভিজে যাওয়ায় হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে হেজার বলেন, > "রাতভর তাঁবুর ভেতর পানি ঢুকছিল, আমরা কিছুই করতে পারিনি। চোখের সামনে আমার ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটা চলে গেল।"
জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ঝড়ে এবং প্রবল শীতে রাহাফের মতো অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্লাবিত দেইর আল-বালাহ ও নুসেইরাত
দেইর আল-বালাহ এবং নুসেইরাতের শরণার্থী শিবিরগুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানে বৃষ্টির পানি হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। হাজার হাজার শিশু ভিজে কাঁপছে, তাদের সামান্য সম্বল আর জামাকাপড় ভাসছে নোংরা পানিতে।
এক বাবা হাহাকার করে বলেন, "আমাদের তাঁবু ঝড়ে উড়ে গেছে, বাচ্চারা খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। জমানো খাবার নষ্ট হয়ে গেছে, আমরা এখন কোথায় যাব?"
জাতিসংঘের তথ্যমতে:
প্রায় ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ এমন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন যেখানে বন্যার ঝুঁকি চরম।
২৭ হাজারেরও বেশি তাঁবু সম্পূর্ণ প্লাবিত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
যুদ্ধের পর প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই
দু'বছর ধরে চলা যুদ্ধের পর গত দুই মাস ধরে যুদ্ধবিরতি চলছে, কিন্তু গাজার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তাঁবুই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় কাঠ, প্লাইউড বা ওয়াটারপ্রুফ তাঁবুর মতো জরুরি সামগ্রী পৌঁছাচ্ছে না।
জ্বালানি ও যন্ত্রপাতির অভাবে সিভিল ডিফেন্স টিমগুলো উদ্ধারকাজ চালাতে পারছে না।
বন্যার পানির সঙ্গে নর্দমার দূষিত জল মিশে যাওয়ায় মহামারী ও পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এক বাস্তুচ্যুত মা তার জলমগ্ন তাঁবুতে বসে আক্ষেপ করে বলেন, "আমরা বুলেটের আঘাত থেকে বেঁচেছি, কিন্তু এখন ঠান্ডা আর বৃষ্টি আমাদের গ্রাস করছে। বিশ্ব আজ কোথায়?"
গাজার আকাশ এখনো মেঘলা, ঝড় থামার কোনো লক্ষণ নেই। আর সেই সঙ্গে থামছে না তাঁবুতে আটকে পড়া লাখো মানুষের কান্নাও।




