স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলার রাজনীতি ছিলো জমিদার নির্ভর, কংগ্রেসই প্রধান দল। শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রায় সবাই জমিদার জোতদার, সবাই উচ্চবিত্ত। কংগ্রেস বা জনতাপার্টি রাজকীয়তা খুব খোলাখুলিই প্রচার করতো।রাজকীয় পোষাকে কোথাও ঘোড়ায় চড়ে,কোথাও পালকী চড়ে ক্যান্ডিডেট আসতেন তখন।বাড়ি বাড়ি প্রচারের চল প্রায় ছিলোই না।খানিক টা বিষয় টা এরকম ছিলো যে ধরুন একটা গ্রামে বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী গেছেন।উনি যেতেন সরাসরী ছোট জমিদার এর বাড়ি।সেই জমিদারের কাছে উনি প্রচার সাড়তেন।এইবার ওই জমিদার ই ঠিক করতেন যে ওই গ্রামের ৭০ টা বাড়ির ভোট জোড়াবলদে (তখন কংগ্রেস এর প্রতীক) যাবে না অন্য কোথাও যাবে।এবং মানুষ ও এই জমিদার বড়দা ছোড়দা মেজদা দের কথায় জায়গা মত ছাপ দিয়ে আসতেন। মানে বিধানসভার ক্যান্ডিডেট গ্রামে এসে বাড়ি বাড়ি ঢুকে ভোট চাইবে এ প্রায় হতই না।খানকয়েক কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থীরা ব্যতিক্রম ছিলেন,কিন্তু তারা দিনরাত প্রচার করলেও ভোট মোড়লদের এলাকা গুলোয় তারা শোচনীয় ফল করতেন।অর্থবল নগন্য।তাদের যা কিছু ভালো ফল ছিলো সবটাই কৃষক সভা বা ট্রেড ইউনিয়নের প্রভাবে।কমিউনিস্ট পার্টি সহ অন্যান্য বামেরা ৬০ এর দশক থেকেই এই পরিস্থিতিতে বদল আনা মশুরু করে।আসতে আসতে জমিদার জোতদার দের পরিবর্তে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে চটকলের শ্রমিকনেতা,গরীব চাষি,প্রাইমারী স্কুল মাস্টার।
সম্ভ্রান্ত জমিদারদের চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করে ঢোলা শার্টের ছাত্রনেতা।রাজনীতির কন্ট্রোল আসে বুনিয়াদী মানুষের হাতে।এই সব এর ফলাফল ই ৭৭ এর ২১ শে জুন।যে জমিতে জমিদারবাবুদের শেষ না হওয়া জমিতে বামপন্থীরা অপারেশান বর্গা করে পাট্টা দিয়েছিলো।সন্ধ্যে হয়ে গেলেই যে বাবুরা নিশ্চিন্তে মদের ফোঁয়ারা সহযোগে বাইজির নাচে মত্ত থাকতেন তাদের ই নাচিয়ে দিয়েছিলো বামপন্থীরা।বাবুরা জমিতে যে মানুষদের বিনে পয়সায় দাসত্ব করাতেন,সেই দাসেরাই লালশালু উড়িয়ে বাবুদের সব জমি নিয়ে নিয়েছিলো।রাতারাতি বাবু কালচার উবে গেছিলো।এর পরের ইতিহাস যদি দেখেন দেখতে পাবেন দক্ষিনপন্থীরা পর্যন্ত বাবু কালচার বর্জন করে মেঠো রাজনীতি তে এসেছিলো।
বামেরা দীর্ঘসময়ে সরকার চালিয়েছে।অনেক কাজেই সফল হয়েছে।অনেক কাজে ব্যর্থও হয়েছে।নিঃসন্দেহে তর্ক চলবে।কিন্তু এর বাইরে অন্য কথা রয়ে গেছে খেয়াল করে দেখবেন ভারতবর্ষের প্রায় সব জায়গাতেই এই জমিদার বংশের রক্তবহন করা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।ব্যতিক্রম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ।৭৭ এর ২১ এ জুন এখানেই সার্থক রাজ্যে ৪৫ শতাংশ ভোট নিয়ে সরকার শুধু চলেনি মননের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।




