ওগো মায়াভরা চাঁদ আর, ওগো মায়াবিনী রাত
ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা এই মাধবী রাত।
নদী নয় নদ , ছোটবেলায় শিখেছিলাম , সেই দামোদর নদের ব্যারেজ পেরিয়েই , বাঁকুড়া জেলায় এক অপরুপ প্রকৃতির ভাণ্ডার , বাইরে থেকে যা বুঝতে পারা মুস্কিল । কোলকাতা থেকে গাড়িতে আসতে তিন ঘণ্টার মত লাগবে, পুরটাই ন্যাশনাল হাইওয়ে। একটা কথা মনে করিয়ে দিতেই হবে। এই বারেজ টা ১৯৫৫ সালে তৈরি, ৩৮ টা গেট ওয়ালা ,প্রায় ২২৭০ ফুট লম্বা ।দুর্গাপুর স্টেশন থেকে বড় জোর ৫/৭ মিনিট গাড়িতে । ভলভো বা অন্য কোনও বাসে এসে মুচিপাড়া স্টপেজে নেমে ৭/৮ কিলোমিটার মতো । টোটো চলে আসবে । বা চাইলে রিসোর্টের গাড়িও পাবেন । শহরের কোলাহল, দূষণ থেকে হঠাত পৌঁছে যাওয়া এক মুক্তির ঠিকানায় ।
৬৩ একর জায়গা, প্রতাপপুর পেরিয়ে শালগড়ার আগে , বারেজ থেকে বড় জোর এক কিলোমিটার । অজস্র গাছ গাছালি , আম বাগান, পেয়ারা বাগান , মুসম্বি বাগান , পেঁপে বাগান কি নেই ! এখানে আবার একটা নার্সেরি মতও আছে , যেখান থেকে বড় বড় গাছের স্যাপলিং সরবরাহ করা হয় । কম্পাউন্ডের মধ্যে হাঁটার কোনও পরিধি নেই । থাকার জন্যে আছে বিরাট একটা বাড়ি , অনেক ঘর , সুন্দর অন্দর শয্যা , ঝক ঝকে আসবাব । আমরা ছিলাম একটু বড় ঘরে , যার সঙ্গে লাগোয়া একটা বিশাল বারান্দা আছে । এই রকম দুই শয্যার ছটি ঘর আছে , যার মধ্যে প্রয়োজনে আরও একটা খাট লাগিয়ে দেওয়া হয় । সকাল সন্ধ্যে ওখানে বসেও কাটিয়ে দেওয়া যায় অনেকটা সময় পাখীর কলতান শুনে । সন্ধ্যে বেলায় বারবিকিউ এর ব্যাবস্থা আছে । বাগানের মাঝে আলো দিয়ে সাজানো। সন্ধেবেলায় নরম আলোয় বেশ একটা মায়াময় পরিবেশ তৈরি হয় ।
পিছনের গেট দিয়ে বাইরে বেরলে একফালি একটা গ্রামের পথ চলে গিয়েছে দামোদরের একটা শাখা । তার স্রোত দেখলে মনে হয় ডুয়ার্সের কোনও স্রোতস্বিনীর কিনারে চলে এসেছি । পায়ে হেঁটে পেরিয়ে আরও কিছুটা দূর অবধি যেতে পারেন , বালি আর জল।
জল আর বালি বর্ষাকালে যে কি অপরূপ শোভা , বলে বোঝানো মুশকিল । একটু দুরেই গেলে দেখেতে পাওয়া যায় বেনারসের ঢঙে, সন্ধ্যা আরতি দামোদরের কিনারায় । এখান থেকে ঘুরে আসা যায় অনেক জায়গা যদি অন্তত তিনটে দিন থাকেন । এর মধ্যে শালি নদীর মধ্যে গাংদুয়া_ড্যাম অন্যতম । জায়গাটায় পৌঁছে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। দূরে ছোট ছোট পাহাড় দেখা যাচ্ছে। ড্যাম এর ধারে কুমড়ো , তরমুজ, গাজর, পেঁপে বা নৌকো এর আদলে তৈরি বসার জায়গা আছে । সঙ্গে বাচ্চারা থাকলে বেজায় খুশী হবে । বর্ষায় এর রূপ আরও সুন্দর । খানিক সময় কাটিয়ে ঘুরে আসতে পারেন কোড়ো_পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। ঘুরে রাস্তা ফিরে সোজা পাহাড়ের মাথায় উঠে গেছে আর সেখানে আছে তপোবন আশ্রম। এখানে পরিবেশ বেশ স্নিগ্ধ, আর মনোরম । অনেকটা সময় শান্তিতে এবং নিশ্চিন্তে কাটানো যায় ।
দামোদরের সৌন্দর্য উপভোগ করার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা রণডিহা । শীতকালে অনেকেই আসেন এই অঞ্চলে দামোদরের ধারে পিকনিক করতে। ব্যারেজের পর নদীর ধার ঘেঁসে সবুজের গালিচা । চাইলে হেঁটে পার হয়ে ওপারের গ্রাম থেকেও ঘুরে আসা যায়।
এখান থেকে যেতে পারেন বেশ কাছেই বিকনা গ্রামে । দেখবেন প্রায় ৬০/৭০ টি পরিবার দিবারাত্রি কি নিষ্ঠা ভরে করে যাচ্ছে ডোকরার কাজ । অপূর্ব শিল্প কর্ম , না দেখলে বিশ্বাস হবে না । সারা পৃথিবী তে যার খ্যাতি ।
এ ছাড়াও আছে পুরাকালের অজস্র মন্দির , সম্ভবত মল্ল রাজাদের রাজত্বকালে নির্মিত পৌরাণিক_স্থাপত্য । উল্লেখযোগ্য লস্করবান্ধের মন্দির , মালিয়াড়ার মন্দির , সোনামুখীর রত্ন শ্রীধর মন্দির , গিরি গোবর্ধনের মন্দির প্রভৃতি । সব লিখতে গেলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে , কিছু তোলা থাক , আপনারাও খুঁজে খুজে বার করে নেবেন ।
গ্রীষ্মেও যদি এসে পড়েন , দুপুরের পর থেকে দেখবেন গাছের ছাওয়ায় বেশ মন্দমধুর হাওয়া । আর দোয়েল, টুনটুনি, মৌটুসি, বাশপাতি , টিয়া , আর কালি শ্যামা প্রভৃতি পাখিরা আপনার মন ভরিতে রাখবে । এই রিসোর্ট এর ভেতরে দুটো বেশ বড় বড় পুকুরও আছে। চাইলে মাছ ধরার ব্যবস্থাও হতে পারে। বর্ষার সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে অবিরাম বারিধারা র মধ্যে ঝিঁঝিঁ পোকা আর ব্যাঙের ডাকের মাঝে আপনার গলা দিয়েও তখন হয়তো বেরিয়ে আসবে রবি ঠাকুরের কোনও গানের কলি ।
এখানে থাকার জন্যে পাবেন ছটা দুই বা তিনজনের থাকার এসি ঘর , চার জনের থাকার দুটো এসি_কটেজ আর তিনটে নন এসি সুন্দর ডরমেটরি । সব মিলিয়ে এখনি থাকতে পারবেন প্রায় ৫৫ জন । আরও কিছু সংযোজন হবে । দাম মোটামুটি ২০০০/৩৫০০ টাকা মতো । ডরমেটরি তে থাকার খরচ আট জনের জন্য ৪০০০ টাকা । খাবার এখানে সুবন্দোবস্ত আছে ।সুন্দর ডাইনিং রুম আছে । সারাদিনের খাবার খরচা মোটামুটি ৮৫০ টাকা মত । কেউ যদি টেন্টে থাকতে চান, তার ও বন্দোবস্ত হয়ে যাবে।
জায়গাটা যে কোনও অফিসের কনফেরেন্স বা ট্রেনিং প্রোগ্রামের জন্যে আদর্শ । ক্লাস রুম আছে , বোর্ড রুম আছে , খেলার_জায়গা আছে । ইনডোর এবং আউট ডোর । স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদের নেচার_স্টাডি ট্যুর , হরটিকালচারাল ট্রেনিং প্রোগ্রাম ( এটা বয়স্ক , অবসরপ্রাপ্ত দের জন্যেও ভাবা যেতে পারে ), স্ট্রেস রিলিভিং প্রোগ্রাম, বা সাময়িক যোগ_চর্চা ইত্যাদি নানাবিধ কারনের জন্যে জায়গাটা ব্যাবহার করা যেতে পারে । আরও খোঁজ নিতে বা বুকিং করতে ফোন করবেন
9932511526 বা 9932121694।






