দুর্গাপুর, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির বহু প্রতীক্ষিত শারদ সংখ্যা ‘চরৈবেতি’ আজ এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হলো। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের সৃজন হলে অনুষ্ঠিত এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শহর এবং জেলার বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই বছরের শারদ সংখ্যাটি পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শিল্পীদের ভূমিকা নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ, গল্প এবং কবিতায় সমৃদ্ধ। সঙ্ঘের সম্পাদক অনিক চক্রবর্তী জানান, ‘চরৈবেতি’ শব্দটির অর্থ হলো 'এগিয়ে চলো', আর এই শারদ সংখ্যার মূল লক্ষ্যই হলো নতুন প্রজন্মের লেখক ও শিল্পীদের আরও বেশি করে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত করা।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও চিন্তক অরিন্দম কোঙার। তিনি 'সাংস্কৃতিক আন্দোলনে আমাদের ঐতিহ্য ও বর্তমান সময়ের কর্তব্য' শীর্ষক এক মনোজ্ঞ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। কোঙার তার বক্তব্যে বলেন, বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমাদের গর্ব। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, বা শম্ভু মিত্রের মতো ব্যক্তিত্বরা শুধু সাহিত্য বা শিল্পের সৃষ্টি করেননি, তারা সমাজের কুসংস্কার ও অসাম্যের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে যখন সমাজে বিভেদ ও সংকীর্ণতার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে, তখন সাংস্কৃতিক কর্মীদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা, মানবিক মূল্যবোধকে তুলে ধরা এবং ভিন্নতার মধ্যে ঐক্য খুঁজে বের করাই এখনকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তার প্রায় চল্লিশ মিনিটের বক্তব্য উপস্থিত প্রায় শতখানেক শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে এবং অনেকের মনেই নতুন করে চিন্তার খোরাক জোগায়।
অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন মুহূর্তে সঙ্ঘের প্রয়াত প্রাক্তন যুগ্ম সম্পাদক অনুনয় চট্টোপাধ্যায়কে স্মরণ করা হয়। তার সাহিত্য ও সাংগঠনিক কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সঙ্ঘের সভাপতি অধ্যাপক সোমনাথ ভট্টাচার্য তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, অনুনয় চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আমাদের সংগঠনের স্তম্ভ। তার অকাল প্রয়াণ আমাদের কাছে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার আদর্শ ও দেখানো পথে হেঁটেই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।
এদিনের অনুষ্ঠানে দুর্গাপুর ও আসানসোলের বহু নতুন ও প্রবীণ লেখক, কবি এবং শিল্পীকে তাদের সাহিত্যকর্ম পাঠ করতে দেখা যায়। তাদের সৃষ্টিতে বর্তমান সময়ের যন্ত্রণা, স্বপ্ন এবং প্রতিরোধের সুর ফুটে ওঠে। সামগ্রিকভাবে, এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি কেবল একটি পত্রিকার আত্মপ্রকাশের মঞ্চ ছিল না, বরং এটি ছিল সমাজের প্রতি লেখক ও শিল্পীদের দায়বদ্ধতার এক নতুন অঙ্গীকার।