ওয়াশিংটন, ডি.সি. – ২৭ নভেম্বর, ২০২৫:
গত বুধবার বিকেলে হোয়াইট হাউসের কাছে এক আফগান নাগরিকের গুলিতে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। ২৯ বছর বয়সী ওই হামলাকারী, যার নাম রহমানউল্লাহ লাকানওয়াল, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাদের লক্ষ্য করে অন্তত ১৫ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। পাল্টা গুলিতে আহত হওয়ার পর সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগের প্রধান পামেলা এ. স্মিথ এই ঘটনাকে “অতর্কিত হামলা” বা অ্যামবুশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে কনস্টিটিউশন এভিনিউয়ের ১৬০০ ব্লকে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ফেডারেল নিরাপত্তা মিশনের অংশ হিসেবে ওই দুই সেনাসদস্য সেখানে টহলে ছিলেন। তাদের দ্রুত স্থানীয় একটি ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার রাতে একজনের জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এবং বর্তমানে দুজনেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন।
হামলাকারীর পরিচয় ও অভিবাসন স্থিতি
আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী, রহমানউল্লাহ লাকানওয়াল ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর মানবিক প্যারোলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ‘টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস’ (TPS) লাভ করেন। তবে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তানের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে—এই কারণ দেখিয়ে আফগান নাগরিকদের সুরক্ষা সুবিধা বাতিল করায় চলতি বছরের শুরুর দিকে লাকানওয়ালের টিপিএস-এর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।
সেনা মোতায়েন নিয়ে বিতর্ক ও পেন্টাগনের পদক্ষেপ
ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে রাস্তার অপরাধ দমনে সহায়তার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০২৫ সালের আগস্টে ২,০০০-এর বেশি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই বিতর্কিত পরিস্থিতির মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল। স্থানীয় ডিসি সরকার এই সেনা মোতায়েনের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছে। তবে বুধবারের হামলার পর পেন্টাগন ঘোষণা করেছে যে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে রাজধানীতে আরও ৫০০ গার্ড সদস্য মোতায়েন করবে, যার ফলে মোট সেনা উপস্থিতি প্রায় ২,৭০০-তে পৌঁছাবে।
প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এই গোলাগুলির ঘটনাকে “শয়তানি কর্মকাণ্ড” (act of evil) বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত করা হয়েছে।
এফবিআই (FBI) এবং এটিএফ (ATF) ঘটনার তদন্তে যোগ দিয়েছে। তদন্তকারীরা লাকানওয়ালের ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং সাম্প্রতিক যোগাযোগগুলো খতিয়ে দেখছেন, তবে এখনও হামলার সুনির্দিষ্ট কারণ বা মোটিভ সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু জানানো হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগও দায়ের করা হয়নি।
এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। ডেমোক্র্যাট নেতারা শহরে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ওপর কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়েছেন, অন্যদিকে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা এই হামলার জন্য অভিবাসন আইনের দুর্বল প্রয়োগকে দায়ী করেছেন।