পার্থ, অস্ট্রেলিয়া: ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধী চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা জানালেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক বা এগ্রেসিভ হিসেবে পরিচিত 'ট্রিপল-নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার' (Triple-negative breast cancer) চিকিৎসায় নতুন আশার সঞ্চার করেছে মৌমাছির বিষ।
২০২০ সালে বিখ্যাত Harry Perkins Institute of Medical Research-এর বিজ্ঞানীরা একটি চাঞ্চল্যকর গবেষণা প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক জার্নাল npj Precision Oncology-তে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, মৌমাছির বিষের প্রধান উপাদান Melittin মাত্র ৬০ মিনিটের মধ্যে ক্যান্সার কোষকে ১০০% ধ্বংস করতে সক্ষম।
গবেষণার মূল ফলাফল:
গবেষকরা দেখেছেন যে, সাধারণ মৌমাছির (Honeybee) বিষে থাকা পেপটাইড 'মেলিটিন' (Melittin) অত্যন্ত শক্তিশালী। এটি বিশেষভাবে কার্যকরী দুই ধরনের কঠিন ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে:
১. ট্রিপল-নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার (Triple-negative breast cancer)।
২. এইচইআর২-এনরিচড ব্রেস্ট ক্যান্সার (HER2-enriched breast cancer)।
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় দেখা গেছে, মেলিটিনের সঠিক ডোজ প্রয়োগ করার মাত্র এক ঘণ্টার (৬০ মিনিট) মধ্যেই ক্যান্সার কোষগুলো মারা যাচ্ছে।
কিভাবে কাজ করে এই বিষ?
বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। মেলিটিন মূলত ক্যান্সার কোষের বাইরের আবরণ বা প্লাজমা মেমব্রেনে ছিদ্র তৈরি করে। এর ফলে কোষটি দ্রুত অকেজো হয়ে পড়ে। এছাড়াও, এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধির জন্য দায়ী দুটি প্রধান সিগনালিং পাথওয়ে— EGFR এবং HER2-কে পুরোপুরি ব্লক বা বন্ধ করে দেয়। ফলে টিউমার আর বড় হতে পারে না।
সবচেয়ে স্বস্তির খবর হলো, ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার এই প্রক্রিয়ায় সুস্থ বা স্বাভাবিক কোষের ওপর এর প্রভাব খুবই নগণ্য। অর্থাৎ, এটি বেছে বেছে ক্যান্সার কোষকে আক্রমণ করতে পারে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সতর্কতা:
গবেষণায় ইঁদুরের মডেলে এই বিষ প্রয়োগ করে দেখা গেছে যে, টিউমারের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনই অতি-উৎসাহী না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
গবেষক দলের মতে, এটি এখনো 'প্রি-ক্লিনিক্যাল' (Preclinical) পর্যায়ে রয়েছে। মানুষের শরীরে এই বিষ কীভাবে নিরাপদে প্রবেশ করানো হবে (Delivery System) এবং এর বিষাক্ততা (Toxicity) বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটুকু, তা নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন।
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা একমত যে, ভবিষ্যতে কেমোথেরাপির পাশাপাশি বা বিকল্প হিসেবে এগ্রেসিভ ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় এই আবিষ্কার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।