নয়াদিল্লি — লিওনেল মেসি ভারতে এলেন, স্টেডিয়ামে হাঁটলেন, হাত নাড়ালেন এবং চলে গেলেন। কোনো ফুটবল ম্যাচ হলো না, গোল হলো না। তবুও ভারত খরচ করল প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। "GOAT ইন্ডিয়া ট্যুর ২০২৫"-এর এই বিপুল খরচের পরিসংখ্যান সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠছে—এটি কি শুধুই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা ছিল, নাকি সুপরিকল্পিত এক ব্যবসায়িক ফাঁদ?
ম্যাচ ছাড়াই কোটি টাকার টিকিট বিক্রি
সাধারণত তারকারা আসেন খেলতে বা পারফর্ম করতে। কিন্তু মেসির ক্ষেত্রে পণ্যটি ছিল শুধুই তার "উপস্থিতি"।
টিকিটের দাম: কোনো খেলা না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র মেসিকে এক নজর দেখার জন্য ভক্তরা ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছেন।
ভীড়: মুম্বাই, দিল্লি এবং কলকাতার স্টেডিয়ামগুলো ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
১১ লক্ষ টাকার 'হ্যান্ডশেক'
ব্যবসার সবচেয়ে বড় দিকটি ছিল 'মিট অ্যান্ড গ্রিট' (Meet and Greet) সেশন। রিপোর্ট অনুযায়ী, মেসির সঙ্গে একটি ছবি তোলা এবং করমর্দন করার জন্য ভক্তরা মাথাপিছু ১১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন। হায়দ্রাবাদ বা অন্য শহরে ব্যক্তিগত সেশনের জন্য এই অঙ্ক আরও বেশি ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবেগ নাকি মার্কেটিংয়ের খেলা?
ভিডিও বিশ্লেষণ এবং বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উন্মাদনা "স্বাভাবিক" ছিল না। এটি ছিল পিআর (PR) এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এক নিখুঁত গেমপ্ল্যান।
১. কৃত্রিম চাহিদা (Artificial Demand): কোনো ম্যাচ ছাড়াই এত চড়া দামে টিকিট বিক্রি প্রমাণ করে যে, মার্কেটিং এজেন্সিগুলো মানুষের "ফিয়ার অফ মিসিং আউট" (FOMO)-কে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে।
২. মিডিয়া ম্যানিপুলেশন: কলকাতায় ইভেন্ট চলাকালীন বিশৃঙ্খলা, লাঠিচার্জ এবং অব্যবস্থাপনার ছবি উঠে এলেও, সোশ্যাল মিডিয়া এবং মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় শুধুই "হাউজফুল" এবং "সাফল্যের" খবর প্রচার করা হয়েছে। নেতিবাচক দিকগুলো সচেতনভাবে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।
লাভ কার, ক্ষতি কার?
দিনশেষে হিসাবটি পরিষ্কার। ব্র্যান্ড, মিডিয়া হাউজ এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো তাদের পকেটে কোটি কোটি টাকা ভরেছে। অন্যদিকে, সাধারণ ভক্তরা আবেগের বশে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করেছেন এমন এক অভিজ্ঞতার জন্য, যেখানে ফুটবল ছিল গৌণ, আর ব্যবসাই ছিল মুখ্য।
এই সফর প্রমাণ করে দিল, আজকের যুগে সঠিক মার্কেটিং জানলে আবেগকে পণ্যে রূপান্তর করে ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করা অসম্ভব কিছু নয়।


