দুর্গাপুর, বর্ধমান:
একদা পূর্ব ভারতের শিল্প–হৃদয় বলে পরিচিত দুর্গাপুর আজ যেন ভগ্নস্মৃতির শহর। বন্ধ কারখানা, থমকে থাকা উৎপাদন, কাজ হারানো হাজারো শ্রমিক—সবকিছুর মাঝেও মানুষের জেদ আর অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই থামেনি। সেই লড়াইয়েরই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠল মঙ্গলবারের "শিল্প বাঁচাও–কাজ বাঁচাও–জেলা বাঁচাও–বাংলা বাঁচাও" পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে, যেখানে সাধারণ মানুষের আর্তি গর্জে উঠল রাজনৈতিক স্লোগানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে।
মানুষের ঢল বিধাননগরে
সকাল থেকেই বিধাননগর পাম্প হাউস মোড় পরিণত হয় জনসমুদ্রে। হাতে প্ল্যাকার্ড, গলায় স্লোগান—“কাজ চাই, শিল্প চাই”—নিয়ে এগিয়ে এলেন শ্রমিক, চাকরি হারানো যুবক, গৃহবধূ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণির মানুষ।
মিছিল যখন এগোতে শুরু করে, তখন বোঝা যায়—এ শুধু কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়; এটি এক বিপন্ন জনপদের বাঁচার চিৎকার।
ঘাম, ক্লান্তি, তবু থামে না যাত্রা
রোদের দহন বা ক্লান্তি কোনো কিছুই থামাতে পারেনি পদযাত্রীদের। বহু মানুষ বললেন—
“আমাদের শহর মরছে। আমাদের কাজ নেই। চুপ করে বসে থাকলে ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে।”
অতীতের গৌরবের সামনে লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা
দ্বিতীয় দিনের যাত্রাপথ যখন ধীরে ধীরে এগোতে থাকে এম.এ.এম.সি (MAMC)-এর দিকে, তখন পরিবেশ আরও আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে।
একদা দুর্গাপুরের গর্বের এই কারখানা আজ ধ্বংসস্তূপের মুখে। সেই ভগ্নপ্রায় গেটের সামনে দিয়ে মিছিল পৌঁছতে পৌঁছতে মানুষ যেন আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠে।
আম্বেদকর মূর্তির সামনে অঙ্গীকার
মিছিলের সমাপ্তি ঘটে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে। আয়োজিত সভায় বক্তারা বাংলার শিল্প–খাতের বর্তমান সংকট ও কর্মসংস্থানের ভাঙাচোরা চিত্র তুলে ধরলে বহু মানুষের চোখ ছলছল করে ওঠে।
মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে নেওয়া হয় শপথ—
শ্রমিকের অধিকার, শিল্পের পুনর্জাগরণ এবং বাংলার গৌরব ফিরিয়ে আনতেই এই আন্দোলন।
শেষ নয়, শুরু
পদযাত্রা একদিন থামবে, কিন্তু দুর্গাপুরের রাজপথে আজ যে আবেগ, যন্ত্রণা এবং প্রতিরোধের আগুন দেখা গেল, তা স্পষ্ট করে দিল—
বাংলার মানুষ হার মানতে রাজি নয়। শিল্প আর রুজির লড়াই চলবে, আরও সংগঠিত রূপে।
হ্যাশট্যাগ:
#BanglaBachaoYatra #ShilpoKajZilaBachaoYatra #CPIMPashchimBardhaman





