নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কিত ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, তা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। তবে এই ঘটনা কি কেবল একটি বিমান সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, নাকি এর পেছনে রয়েছে গভীর কোনো সামাজিক অসুখ? আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল ‘কাউন্টারকারেন্টস’-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বিশিষ্ট সমাজ বিশ্লেষক ড. রঞ্জন সলোমন দাবি করেছেন, এই ঘটনা ভারতের ক্রমহ্রাসমান কর্পোরেট মানদণ্ড এবং ফাটল ধরা সামাজিক কাঠামোর এক নির্মম আয়না।
বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি জাতীয় অস্থিরতার প্রতীক?
ড. সলোমনের মতে, বিমানের কেবিনের ভেতরে যাত্রী ও কর্মীদের মধ্যে যে বাদানুবাদের দৃশ্য দেখা গেছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি ভারতের বর্তমান জাতীয় জীবনের গভীর অস্বস্তিকেই প্রতিফলিত করে। তিনি উল্লেখ করেছেন, আমাদের সমাজ বর্তমানে এক চরম অর্থনৈতিক টানাপোড়েন এবং মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া অস্থিরতা এখন আকাশপথেও দৃশ্যমান। সমাজ হিসেবে আমরা যে ক্রমশ সহনশীলতা হারাচ্ছি, এই ঘটনা তারই এক অকাট্য প্রমাণ।
মানবিক মর্যাদার চেয়ে 'এফিসিয়েন্সি' যখন বড়
প্রবন্ধটিতে লেখক বর্তমান কর্পোরেট সংস্কৃতির কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, আজকের ব্যবস্থায় মানুষের মানবিক মর্যাদা (Human Dignity) বা আবেগের কোনো স্থান নেই। সেখানে সবকিছুর উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয় ‘কর্মদক্ষতা’ বা ‘এফিসিয়েন্সি’-কে। প্রাতিষ্ঠানিক অনমনীয়তা (Institutional Inflexibility) এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে গ্রাহক বা কর্মী—উভয়ই কেবল পরিসংখ্যান মাত্র। ড. সলোমন বিশ্লেষণ করেছেন যে, যখন একটি সিস্টেম মানুষের সাধারণ অনুভূতিকে উপেক্ষা করে যান্ত্রিকতাকে অগ্রাধিকার দেয়, তখন সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত হতাশা এভাবেই বিস্ফোরিত হয়।
সহানুভূতির সংকট ও জনজীবনের অবক্ষয়
এই ‘ইন্ডিগো ইমব্রোগ্লিও’ বা ইন্ডিগো-জট আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ভারতীয় সমাজে সহানুভূতি বা ‘এমপ্যাথি’র তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। কর্পোরেট জগত এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সংঘাত এখন চরমে। অর্থনৈতিক চাপ এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদাসীনতা মানুষকে এতটাই প্রান্তিক করে ফেলেছে যে, সামান্য ঘটনাতেও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন: সৌজন্যবোধ কি বিলুপ্তির পথে?
প্রতিবেদনের শেষ অংশে ড. সলোমন জাতির বিবেকের কাছে কিছু কঠিন প্রশ্ন রেখেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, জনজীবন থেকে কি আমরা চিরতরে সৌজন্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি? যে সভ্যতা ও আতিথেয়তার জন্য ভারত একদা গর্বিত ছিল, কর্পোরেট ইঁদুর দৌড় কি তা গ্রাস করে নিচ্ছে?