আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কোকেন উৎপাদন ও পাচার রোধে কলম্বিয়ার ওপর সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই হুমকির কড়া জবাব দিয়েছেন কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কলম্বিয়া কোনোভাবেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত করবে না এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা যেকোনো লড়াইয়ে প্রস্তুত।
ট্রাম্পের হুমকি ও আল্টিমেটাম
সম্প্রতি এক বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, কলম্বিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হচ্ছে, যা আমেরিকার যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কলম্বিয়া সরকার যদি মাদক উৎপাদন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকবে না। ট্রাম্প বলেন, "প্রয়োজনে আমরা মাদক তৈরির ল্যাবগুলো লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালাব। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট যদি সহযোগিতা না করেন, তবে তাকেও এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।" ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে সরাসরি সামরিক আগ্রাসনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
পেত্রোর পাল্টা জবাব: ‘জাগুয়ারকে জাগাবেন না’
ট্রাম্পের এই আগ্রাসী মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।
পেত্রো বলেন, "আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি দেওয়া মানে কলম্বিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। আপনারা যদি মনে করেন ভয় দেখিয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবেন, তবে ভুল করছেন। ঘুমন্ত জাগুয়ারকে (বাঘ) জাগাবেন না। আমরা আমাদের ইতিহাস এবং মাটি রক্ষা করতে জানি।"
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের ডাক
প্রেসিডেন্ট পেত্রো অভিযোগ করেন, মাদকবিরোধী অভিযানের নাম করে যুক্তরাষ্ট্র আসলে ল্যাটিন আমেরিকায় তাদের পুরনো ‘সাম্রাজ্যবাদী নীতি’ ফিরিয়ে আনতে চাইছে। তিনি বলেন, "কলম্বিয়া এখন আর কারো পেছনের উঠোন (Backyard) নয়। আমরা আমেরিকার হুকুমের দাস নই। মাদক সমস্যা একটি বিশ্বব্যাপী সংকট, এটি সমাধানের নামে অন্য দেশের ওপর হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।"
তিনি আরও বলেন, কলম্বিয়ার বর্তমান সরকার মার্কিন সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলে মাদক ল্যাব ধ্বংস করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চায় সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে এ অঞ্চলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি
দুই নেতার এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের জেরে ওয়াশিংটন ও বোগোটার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় ধরণের ফাটল ধরেছে। কলম্বিয়ার বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনগণ পেত্রোর সমর্থনে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা ট্রাম্পের এই হুমকিকে কলম্বিয়ার জাতীয় মর্যাদার ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, পেত্রোর এই কঠোর অবস্থান ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য বামপন্থী সরকারগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।