" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory স্বপ্নভঙ্গের বিষাদ আর এক পরাজিত সৈনিকের শেষ বিদায়: নিরুপম সেনের একাকী উপাখ্যান //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

স্বপ্নভঙ্গের বিষাদ আর এক পরাজিত সৈনিকের শেষ বিদায়: নিরুপম সেনের একাকী উপাখ্যান



বিশেষ প্রতিবেদন | কলকাতা

শীতের কুয়াশা মোড়া কলকাতার এক হাসপাতালের কেবিনে যখন যন্ত্রের সাইরেনটা থেমে গেল, তখন আসলে থমকে গিয়েছিল একটি স্বপ্ন—যে স্বপ্ন বাংলাকে এক আধুনিক শিল্পোন্নত রাজ্য হিসেবে দেখার। তিনি নিরুপম সেন। বাংলার শিল্পায়নের সেই রূপকার, যিনি জীবনের শেষ দিনগুলোতে বয়ে বেড়িয়েছিলেন এক মহৎ পরাজয়ের বিষাদ।

একজন ‘আধুনিক স্থপতি’র উত্থান

বামফ্রন্ট শাসনের শেষ দশকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে দাঁড়িয়ে নিরুপম সেন যখন শিল্পের ডাক দিয়েছিলেন, তখন তাঁর চোখে ছিল এক নতুন বাংলার মানচিত্র। তিনি বুঝেছিলেন, কেবল কৃষিনির্ভরতায় একটি জাতির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে না। তাই বর্ধমানের ছাত্র আন্দোলনের সেই লড়াকু সৈনিক কলম তুলে নিয়েছিলেন টাটা-ন্যানো কিংবা ইন্দোনেশিয়ার সেলিম গ্রুপের মতো শিল্পগোষ্ঠীকে বাংলায় আনার জন্য। তিনি চেয়েছিলেন ধোঁয়া ওঠা চিমনির সারি আর হাজার হাজার তরুণের কর্মসংস্থান।



সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম: যেখানে থমকে গেল স্বপ্ন

ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর। যে সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামকে তিনি শিল্পায়নের ‘মডেল’ করতে চেয়েছিলেন, সেই মাটিই হয়ে উঠল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কালবেলা। ৯৯৭ একর জমি আর একরাশ বিরোধী আন্দোলনের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল তাঁর সাজানো বাগান। শিল্পের সেই ‘আধুনিক স্থপতি’ দেখলেন, কীভাবে তাঁর তিল তিল করে গড়া পরিকল্পনাগুলো রাজনীতির চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

টাটাদের বিদায় আর নন্দীগ্রামের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম—নিরুপম সেনকে করে তুলেছিল এক ‘পরাজিত সৈন্য’। কিন্তু তাঁর পরাজয় কি কেবল ব্যক্তিগত ছিল? নাকি তা ছিল এক শিল্পোন্নত বাংলার স্বপ্নভঙ্গ?

নিঃশব্দ প্রস্থান ও মহাকালের বিচার

২০১১-র ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। যে মানুষটি এক সময় রাইটার্স বিল্ডিংয়ের অলিন্দে শিল্পের ফাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, জীবনের শেষ কয়েকটা বছর তিনি কাটিয়েছেন পক্ষাঘাত আর স্মৃতিভ্রষ্টতার সাথে লড়াই করে। পরাজয় তাঁকে গ্রাস করেছিল, কিন্তু তাঁর আদর্শকে টলাতে পারেনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করতেন—শিল্প ছাড়া বাংলার মুক্তি নেই।

আজ যখন সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের সেই পরিত্যক্ত জমিগুলোর দিকে তাকানো হয়, তখন ধুলোমাখা সেই জমিতে যেন নিরুপম সেনের দীর্ঘশ্বাস মিশে থাকে। তিনি হার মেনেছিলেন সময়ের কাছে, রাজনীতির পাটিগণিতের কাছে, কিন্তু তাঁর স্বপ্নটা কি ভুল ছিল?


নিরুপম সেন চলে গেছেন আজ কয়েক বছর। কিন্তু বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে তিনি থেকে যাবেন সেই ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হয়ে, যিনি শিল্পের মশাল জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নিজেই পুড়ে ছাই হয়ে গেলেন সেই আগুনের শিখায়। দিনশেষে তিনি ছিলেন এক আধুনিক শিল্পের স্বপ্ন দেখা এমন এক স্থপতি, যাঁর নকশাগুলো বাস্তবে রূপ পাওয়ার আগেই ছিঁড়ে ফেলেছিল ইতিহাস।



Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies