নিজস্ব প্রতিবেদন, কামারহাটি, ১৭ ডিসেম্বর: মাঠটা কি আজ বড্ড ছোট হয়ে গেল? ভিড়ের চাপে উপচে পড়া কামারহাটির দেওয়ানপাড়া মাঠ আজ যেন সেই প্রশ্নই তুলে দিল শাসকের দরবারে। দীর্ঘ 'বাংলা বাঁচাও যাত্রা'র শেষ লগ্নে এসে আক্ষরিক অর্থেই জনসমুদ্রে পরিণত হলো বামেদের সমাবেশ। আবহে তখন শুধুই স্লোগান আর লাল পতাকার ঢেউ, যেন এক ‘মিনি ব্রিগেড’ প্রত্যক্ষ করল উত্তর ২৪ পরগনা।
উত্তরের জেলাগুলো থেকে যে প্রতিবাদের মশাল জ্বলেছিল, আজ কামারহাটিতে এসে তা যেন দাবানলে রূপ নিল। দীর্ঘ পথপরিক্রমা শেষে ক্লান্তির লেশমাত্র নেই কর্মীদের চোখে-মুখে, বরং আছে এক নতুন জেদ—বাংলাকে বাঁচানোর জেদ। মিছিলের অগ্রভাগে দীপ্ত পদক্ষেপে হাঁটছেন ছাত্র-যুব নেতৃত্ব, আর তাঁদের সঙ্গ দিচ্ছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। তাঁদের দাবি স্পষ্ট—ধর্মের নামে বিভাজন নয়, চাই রুজি-রুটির নিশ্চয়তা, চাই শিক্ষা, চাই কাজ।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, শুধুই দলীয় কর্মী নন, পথের দুধারে সাধারণ মানুষও আজ মিলেমিশে একাকার। সিধুর মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিলে পা মিলিয়েছেন আবালবৃদ্ধবনিতা। এসএফআই নেতৃত্ব থেকে শুরু করে কৌস্তভ চ্যাটার্জির মতো বক্তারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, "মন্দির-মসজিদ নিয়ে রাজনীতি নয়, আমাদের লড়াই ভাতের লড়াই, কাজ পাওয়ার লড়াই।"
মিছিলে হাঁটা এক প্রবীণ কর্মীর কথায়, "অনেকদিন পর বুক ভরে শ্বাস নিলাম। এই ভিড় বলে দিচ্ছে মানুষ আর চুপ করে থাকবে না। দেওয়ানপাড়া মাঠ আজ বুঝিয়ে দিল, লাল ঝান্ডা এখনও ফুরিয়ে যায়নি।"
সমাবেশ শুরুর আগেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ। তিল ধারণের জায়গা নেই। মঞ্চ থেকে যখন স্লোগান উঠছে 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ', তখন সেই আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের কণ্ঠে। আজকের এই জনজোয়ার এবং তার আবেগঘন আবহ নিঃসন্দেহে আসন্ন ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতিতে এক বড়সড় বার্তা দিয়ে গেল।
শাসকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে, কর্মসংস্থানের দাবিতে এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষায়—বামেরা যে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, আজকের কামারহাটির এই ‘মিনি ব্রিগেড’ সম্ভবত তারই অশনি সংকেত।





